৫০ চার, ২২ ছক্কায় ৪০৪ রানের ইনিংসে মুস্তাকিমের ইতিহাস
বার্তাকক্ষ | প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৯:৩০

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মাঠে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মুস্তাকিম যা করেছেন, দেশের স্বীকৃত ক্রিকেটে তো নয়-ই, স্কুল ক্রিকেটেও তা আগে কখনও দেখা যায়নি।
বর্তমান সময়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক দলকেই ৩০০-৩৫০ রান তুলতে দেখা যায়। সংগ্রহটা যদি ৪০০ পেরিয়ে যায়, সেটাকে পাহাড় সমান সংগ্রহ বলা হয়। কেমন হয়, যদি একজন ব্যাটসম্যানই এই পরিমাণ রান তোলেন! অবিশ্বাস্য শোনাবে, কিন্তু প্রাইম ব্যাংক স্কুল ক্রিকেটে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনাই ঘটেছে। অপরাজিত ৪০৪ রানের ইনিংস খেলে ইতিহাস লিখেছেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের ওপেনার মুস্তাকিম হাওলাদার।
স্কুল ক্রিকেটের জেলা পর্যায়ের ম্যাচ, এটাকে স্বীকৃত ক্রিকেট বলার সুযোগ নেই। তাই এটাও বলার সুযোগ নেই যে, স্বীকৃত ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড গড়েছেন নবম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাকিম। তবে মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মাঠে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তিনি যা করেছেন, দেশের স্বীকৃত ক্রিকেটে তো নয়-ই, স্কুল ক্রিকেটেও তা আগে কখনও দেখা যায়নি।
মঙ্গলবার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল এন্ড কলেজের বিপক্ষে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করেন মুস্তাকিম। ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট উইকেটে থেকে ১৭০ বলে ২৩৭.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ৫০টি চার ও ২২টি ছক্কায় ৪০৪ রানের বিস্ময়কর এক ইনিংস খেলেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে সোয়াদ পারভেজের সঙ্গে ৬৯৯ রানের বিশাল জুটি গড়েন তিনি। অধিনায়ক সোয়াদ ১২৪ বলে ২০৬.৪৫ স্ট্রাইক রেটে ৩২টি চার ও ১৩টি ছক্কায় ২৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন। যা তার ক্যারিয়ার সেরা।
এ দুজনের ব্যাটিংয়ে রান পাহাড় গড়ে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ। ২ উইকেটে ৭৭০ রান তোলে তারা। সেন্ট গ্রেগরির বোলারদের ওপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন মুস্তাকিম-সোয়াদ। আদ্রিত্য বনিক ১০ ওভারে ১৬৪ রান খরচা করেন। ৯ ওভারে ১৩২ রান দেন তানভীর রহমান। ১০ ওভারে ১১৫ রান দেন স্যামসন রহমান। আরও বেশি ইকোনমিতে রান খরচা করেন ইফাজ উদ্দিন, ৫ ওভারে দেন ১০০ রান।
বাকি বোলারদের সবাই ওভারপ্রতি ১৪ রানের বেশি করে রান দেন। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় মাত্র ১১.৪ ওভারে ৩২ রানেই গুটিয়ে যায় সেন্ট গ্রেগরির ইনিংস। ৭৩৮ রানের বিশাল জয় পায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ। সেন্ট গ্রেগরির কেবল একজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন, ১০ রান করেন তিনি। সাতজন ব্যাটসম্যান রানের খাতা খুলতে পারেননি। সেন্ট গ্রেগরির ব্যাটিংয়ে ধস নামানো হাসান হৃদয় ৬ ওভারে ১১ রানে ৬ উইকেট নেন। ব্যাট হাতে ডাবল সেঞ্চুরির পর বল হাতেও দাপট দেখানো সোয়াদ ৫.৪ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট নেন। ক্যামব্রিয়ানের এই দুজনই কেবল বোলিং করেছেন।
ম্যাচ শেষ করে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসেন মুস্তাকিম ও সোয়াদ। এখানে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ও ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের ম্যাচের কিছু অংশ দেখেন তারা। ম্যাচের পর মুস্তাকিমের মাথায় ক্যাপ পরিয়ে দেন স্কুল ক্রিকেট থেকে উঠে আসা প্রাইম ব্যাংকের অলরাউন্ডার শাহাদাত হোসেন দিপু। এরপর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে মুস্তাকিম ও সোয়াদ।
বড় ইনিংস খেলার অভিজ্ঞতা আছে মুস্তাকিমের। আজ উইকেটে গিয়ে কিছু বল মোকাবিলার পর আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাওয়া এই ওপেনার বিশ্বাস করতে শুরু করেন, কিছু একটা করা সম্ভব। তরুণ এই ব্যাটসম্যান বলেন, 'নিজের মধ্যে বিশ্বাস ছিল। আগে অনেক জায়গায়, অনেক টুর্নামেন্টে এমন বড় বড় ইনিংস খেলেছি। তাই বিশ্বাস ছিল যে পারব। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল আজকে একটা কিছু করার। ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করছিলাম ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক সংযোগ করার। পরে দেখলাম যে ভালো লাগছে, তখন মনে হচ্ছিল যে পারবো।'
পাওয়ার হিটিংয়ের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টুর্নামেন্টগুলো ভালো লাগে তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফাইংয়ে তেজকুনিপাড়া ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলা মুস্তাকিমের। অনুশীলনে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'অনুশীলনে সব সময় আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই করা হয়। আমার কোচ বলেন, যা-ই মারবে জোর দিয়ে মারবে। মন্থর ক্রিকেট খেলা যাবে না। ক্রিকেট তো আধুনিক হয়ে গেছে। ওভাবেই তাল মিলিয়ে চেষ্টা করছি। ক্যারিবিয়ানদের টুর্নামেন্টগুলো দেখতে ভালো লাগে। সেখানে পাওয়ার হিটিং বেশি হয়। ওগুলো দেখতে ভালো লাগে। আমার পছন্দের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।'
অনেকদিন ধরে এক সঙ্গে খেলায় মুস্তাকিম-সোয়াদের মধ্যে বোঝাপড়াটা বেশ ভালো। মুস্তাকিমের ৪০০ পূরণে শেষ দিকে তাকে বেশি স্ট্রাইক দেন সোয়াদ। সতীর্থকে ধন্যবাদ জানিয়ে মুস্তাকিম বলেন, 'দুজনেরই আজকে ভালো ব্যাটে লাগছিল বল। দুজন মিলেই শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। পঞ্চাশ রানে (আসলে ৭১) ২ উইকেট পড়ার পর একটু ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলাম। তখন এক দিকে আমি মেরে খেলছিলাম। আর ওকে বলেছিলাম ধরে খেলতে। ও আর আমি অনেক ছোটবেলা থেকেই খেলছি। ও আমাকে অনেক সহায়তা করেছে। শেষ দিকে তো ওভার কম ছিল। ও আমাকে স্ট্রাইক দিয়ে দিয়ে রানটা বেশি করাতে সাহায্য করেছিল। তাই ওকে ধন্যবাদ।'
২০১৮ সাল থেকে একসঙ্গে খেলছেন মুস্তাকিম-সোয়াদ। নিজেদের নিয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সোয়াদ বললেন এভাবে, 'আমরা অনূর্ধ্ব-১৪ থেকে একসাথে খেলছি, ২০১৮ সাল থেকে। সে জন্য বোঝাপড়াটাও বেশ ভালো দুজনের। আর ইনিংসের শেষের দুই ওভারে ওর ৪০০ হতে আর ২১ রান লাগতো। তখন আমি স্ট্রাইকে ছিলাম, পরে আমি ওকে সিংগেল নিয়ে স্ট্রাইক দিয়ে দিই।'
'ও একা পাঁচ বল খেলে। পরের ওভারেও প্রথম বলে সিংগেল নিয়ে স্ট্রাইক দিই ওকে। সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতাটা বেশ ভালো। দুজনই আজকে নট আউট থাকতে পারসি। পুরাটা ওভার খেললাম, মজাই লাগসে আজকে। আর এর আগে সেঞ্চুরি করেছি, তবে এমন ২৫০ রানের বড় ইনিংস খেলিনি।' যোগ করেন তিনি।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।