লিবিয়ার বন্যায় মৃতের সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে জানা নেই, স্বজনদের আহাজারি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:১২

ছবি: সংগৃহীত

ভয়াবহ বন্যার পর লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে লিবিয়া। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দারনায় ঘূর্ণিঝড়ের পর বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উদ্ধার তৎপরতা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লাশের সারি। ফলে শেষ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে। এমন আশঙ্কা করেছেন শহরটির মেয়র আবদুলমেনাম আল-গাইথি।

স্থানীয়রা এত দ্রুত পানি প্রবেশ করাকে সুনামির সঙ্গে তুলনা করছেন। আল-জাজিরা বলছে, রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের আঘাতে শহরের উপকণ্ঠে একটি বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে হঠাৎ আসা বিশাল জলরাশির তোড়ে ধসে পড়ে নদীপাড়ের বহু ভবন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাড়িঘরসহ ভেসে যায় ঘুমিয়ে থাকা অসংখ্য পরিবার।

লিবিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হিচেম আবু চকিউয়াত রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৩০০টির বেশি মরদেহ চিহ্নিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে এবং এমনকি দ্বিগুণও হতে পারে।

দেরনার মেয়র আল-গাইথি বলেছেন, আমাদের এখন মরদেহ উদ্ধারে বিশেষ দল প্রয়োজন। ধ্বংসস্তূপের নীচে ও পানিতে অনেক মরদেহ রয়েছে। এ কারণে শহরে মহামারি দেখা দিতে পারে।

গেলো মঙ্গলবার দারনা ছেড়ে বের হতে পারা মাব্রুকা এলমেসমারি নামে একজন সাংবাদিক এই ঘটনাকে বিশাল বিপর্যয় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এখানে পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, পেট্রোল নেই। শহরটি পুরো সমান হয়ে গেছে।

নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন বিদেশিও রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই সুদান এবং মিসরের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ছয় বাংলাদেশিও রয়েছেন। বন্যার পর থেকে অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে, এই সংখ্যা অন্তত পাঁচ হাজার।

পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের বিমানমন্ত্রী ও ইমার্জেন্সি রেসপনস কমিটির সদস্য হিচেম কিওয়াট জানিয়েছেন, ডেরনা শহরের চারদিকে লাশ পড়ে আছে। শহরের দুটি বাঁধ ও চারটি সেতু ভেঙে পড়ায় অন্তত এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দী হয়ে আছেন।

জাতিসংঘ বলছে, ডেরনায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বেঁচে থাকাদের জন্য ১০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

গত সপ্তাহে গ্রিসে আছড়ে পড়ার পর রোববার লিবিয়ায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েল। এসময় ভারী বৃষ্টিতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। প্লাবিত হয় রাজধানী ত্রিপোলিসহ উপকূলীয় শহরের রাস্তা-ঘাট ও বাড়িঘর। ভেঙে পড়ে গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পর স্বজনদের মরিয়া হয়ে খুঁজছেন দারনার প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকজন। উদ্ধারকারীরা মরদেহ রাখার জন্য আরও বডি ব্যাগ চাইছেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top