নাগোরনো-কারাবাখে জ্বালানি ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ২০, সংঘাত মিটবে কবে?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:২০

ছবি: সংগৃহীত

আজারবাইজানের নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে একটি জ্বালানি ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২০ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় আর্মেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। মঙ্গলবার বিবিসি জানায়, আহত অন্তত ৩০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

আজারবাইজান সামরিক আক্রমণ চালিয়ে বিচ্ছিন্ন নাগরনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আর্মেনিয়ান সরকার বলেছে, ১৩ হাজার ৩৫০ জন শরণার্থী ছিটমহল থেকে দেশে প্রবেশ করেছে।

নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত একটি ভূখণ্ড, তবে এখানকার বাসিন্দাদের অধিকাংশই জাতিগতভাবে আর্মেনীয়। আজারবাইজানের অভিযোগ, নাগোরনো-কারাবাখসহ আশপাশের বিশাল আজারবাইজানি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছিল আর্মেনিয়া।

গত সপ্তাহে বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে বিশেষ অভিযান চালায় আজারবাইজান। সম্ভবত জাতিগত নির্মূলের জন্যই এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি করছে আর্মেনিয়া সরকার। আর্মেনিয়ার সরকার যুদ্ধের কারণে বাস্তুহারা মানুষকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর থেকেই তারা এলাকা ছাড়তে শুরু করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাগোরনো-কারাবাখের মানবাধিকার ন্যায়পাল গেঘাম স্টেপানিয়ান লিখেছেন, জ্বালানি ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের জন্য অঞ্চলটির হাসপাতালে পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

গেলো ১৯ সেপ্টেম্বর নাগোরনো-কারাবাখে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান শুরু করে আজারবাইজান। এই অভিযানে ২০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানান গেঘাম স্টেপানিয়ান। অভিযানের পর সংঘাতপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখ থেকে শত শত বাসিন্দা আশ্রয় নিচ্ছেন আর্মেনিয়ার বিভিন্ন শহরে। রেড ক্রস এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের সহায়তা করছে।

আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে সেখানে এটাই চলছে (জাতিগত নিধন) এবং এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, কারণ এ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানানোর চেষ্টা করছি।

আজারবাইজান বলছে, যে তারা জাতিগত আর্মেনিয়ানদেরকে ‌‘সমান নাগরিক’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। লোকজন ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে আর্মেনিয়ার সীমান্তে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে।

নাগোরনো-কারাবাখ দক্ষিণ ককেসাসের একটি পাহাড়ি এলাকা। এটি আজারবাইজানের অংশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তবে তিন দশক ধরে এটি জাতিগত আর্মেনিয়ানরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এই ছিটমহলের প্রতি আর্মেনিয়া এবং তাদের মিত্র রাশিয়ার সমর্থন ছিল। বছরের পর বছর ধরে সেখানে শত শত রুশ সেনা ছিল।

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান কয়েক দশক ধরে বিবাদে লিপ্ত রয়েছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের ভূখণ্ডের ভেতরে অবস্থিত হলেও ১৯৯৪ সালের এক যুদ্ধের পর থেকে আর্মেনিয়ার সমর্থনে জাতিগত আর্মেনীয় বাহিনী ওই অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।

ইতোমধ্যে নাগোরনো-কারাবাখ ঘিরে দুই প্রতিবেশী আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া অন্তত দুবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। ১৯৯০ এর দশকের গোড়ার দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রথমবার যুদ্ধে জড়ায় দেশ দুটি।

সাবেক সোভিয়েত এ দুই রাষ্ট্র বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে ২০২০ সালে ফের প্রাণঘাতী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। দুই দেশের সৈন্যদের হামলা-পাল্টা হামলায় সেই যুদ্ধে উভয়পক্ষের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যুদ্ধের পর আর্মেনিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া নাগোরনো-কারাবাখে কয়েক হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে শান্তিরক্ষীদের পরে প্রত্যাহার করে নেয় মস্কো।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top