রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

স্বাগত ২০২৪

ঘটনাবহুল ২০২৩ বিদায় নিচ্ছে আজ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০৪

ছবি: সংগৃহীত

অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ২০২৩ সাল। আজ রোববার সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে শুরু হবে খ্রিষ্টীয় এই বছরকে বিদায়ের আয়োজন। সাঁঝ গড়িয়ে মধ্যরাত হতেই মহাকালে হারিয়ে যাবে আরেকটি বছর। বিদায়ী বছরের দুঃখ-বেদনা ভুলে নতুন আশায় স্বাগত জানানো হবে ২০২৪ সালকে।

পৃথিবীর তাপমাত্রার আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে ২০২৩ সাল। যা তাপমাত্রা রেকর্ড শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত নথিভুক্ত উষ্ণতার রেকর্ডে সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে দক্ষিণ ইউরোপ ও উত্তর ইউরোপের দেশ ফ্রান্স, স্পেন এবং পর্তুগালে ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ দাবানল। ইউরোপ থেকে আমেরিকা নয়, তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত হয় এশিয়ার দেশগুলো।

বাংলাদেশে খরায় পুড়ে ফসলের মাঠ। চলতি বছর ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি। মরুভূমির দেশের চেয়েও বেশি তাপমাত্রায় পুড়ছে বাংলাদেশ। দুঃসহ গরমে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরও বেহাল দশা হয়।

ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা ভূখণ্ড ইসরাইলের বোমা হামলায় ক্ষত-বিক্ষত ও রক্তস্নাত হয়েছে এ বছর। ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস ইসরাইলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক লোককে হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। তারপরই অপারেশন ‘আয়রন সোর্ড’ শুরু করে ইসরাইলি সেনারা। আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক অবস্থানের ওপর হামলা শুরু করে। এতে গাজা পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে। এর মধ্যে ২১ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ চলছে সুদানে। ৬ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে তুরস্ক ও সিরিয়া। বিশ্বের গড় তাপমাত্রা প্রতি বছর আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিদায়ি ২০২৩ সালে দাবদাহ ভুগিয়েছে বিশ্বের নানা অঞ্চলের মানুষকে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিপাকে পড়েছে আমদানিনির্ভর দেশগুলো। কারণ জ্বালানি রপ্তানিতে যেমন রাশিয়া শীর্ষে রয়েছে, তেমনি খাদ্য রপ্তানিতে ছিল ইউক্রেনের অন্যতম অবদান। ইউক্রেনের শস্যের ওপর বিশ্বের অনেক দেশ নির্ভরশীল। তাই দেশে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে জ্বালানির ক্ষেত্রে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে আকাশচুম্বী। তৃতীয় বিশ্বে সংকট আরও গভীর। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। ২০২৩ সালে এ যুদ্ধের এক বছর পার হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন এই যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই।

বিদায়ী ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি এসব দুর্যোগের কারণে সীমাহীন মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে দেশে দেশে। ভূমকিম্প, অতিবৃষ্টি, বন্যা, দাবদাহ, দাবানল, বায়ুদূষণ, তুষারপাতের মতো নানা দুর্যোগে হতাহতসহ ভোগান্তিতে পড়েছে লাখো মানুষ। ২০২৩ সালের শুরু ও শেষের দিকে স্মরণকালের ভয়াবহ ও বিধ্বংসী দুটি ভূমকিম্প দেখেছে বিশ্ব। গত ৬ ফেরুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ায় এবং ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোয় বড় ভূমিকম্প হয়। এসব ভূমিকম্পে নিহত হয় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। 

যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে? মুছে যাবে সব? না, সবকিছু মুছে যায় না। যদিও অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। আবার পাওয়া-না পাওয়ার অনেক ঘটনা থাকবে উজ্জ্বল হয়ে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top