রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়াল

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৩:৫৫

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণলায়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ১১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী গাজা উপত্যকায় বিভিন্ন পরিবারের বিরুদ্ধে ১৬টি গণহত্যা চালিয়েছে এবং এতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৭ জন শহীদ এবং আরও ১৫২ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এ দফায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে অবস্থান নিয়েছে ১৩ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। যার একটি বড় অংশই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এই রাফাহকেই এখন টার্গেট করেছে ইসরায়েল।

গত বৃহস্পতিবার এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি হলো রাফাহ। শিগগিরই সেখানে ইসরায়েলি অভিযান শুরু করবে। আর আইডিএফের এক কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের অন্তত ৪টি ব্যাটালিয়ন আত্মগোপন করে আছে রাফাহতে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের এই অভিযানের মিশন হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। রাফাহ (হামাসের) ৪টি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে মোকাবিলা না করে এই মিশন শেষ করা সম্ভব নয়।

রাফাহতে ইসরায়েলের নতুন এই অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইসরায়েল যদি রাফাহতে সত্যি অভিযান শুরু করে তা হবে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। আগে এক দফায় বাস্তুচ্যুত হওয়া লাখো মানুষ আরেকবার আশ্রয় হারাবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েল রাফাহতে অভিযান চালালে তা হবে মানবতার বিরুদ্ধে হামলা।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছিল, ২৯ জানুয়ারি ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত ও ইসরায়েলি সীমান্ত পুলিশ পশ্চিম তীরের জেনিনে ইবনে সিনা হাসপাতালে এক যৌথ ছদ্মবেশী অভিযান চালিয়ে তিন ফিলিস্তিনি ‘জঙ্গি’কে হত্যা করেছে।

ইসরায়েলি কমান্ডোরা চিকিৎসাকর্মী ও মুসলিম নারীর ছদ্মবেশ ধরে ফিলিস্তিনের অধীকৃত পশ্চিম তীরের হাসপাতালে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে যে কাণ্ড ঘটিয়েছে তা যুদ্ধাপরাধ হতে পারে। বলেছেন জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন আহত এক রোগীকে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন, সুরক্ষিত চিকিৎসাকর্মী ও বেসামরিকদের ছদ্মবেশ ধরে ইসরায়েলি বাহিনী দৃশ্যত বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে, যা যেকোনো পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ; এখানেও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

তারা ইসরায়েলের র্কর্তৃপক্ষের প্রতি এ বিষয়ে একটি তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞরা জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট মানবাধিকার ইস্যু পরীক্ষা করার জন্য নিযুক্ত বিশেষ প্রতিবেদক।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই হাসপাতালে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের এক যোদ্ধাও ছিলেন, অন্য দুজন জেনিন ব্রিগেড ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখার পক্ষে কাজ করতেন।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিককে ধরেও নিয়ে যায়। সেই হামলার পর সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।

চার মাস ধরে চলমান আছে সেই অভিযান। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের নিরলস চেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দিনের অস্থায়ী বিরতি চুক্তি হয়েছিল হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে। সেই ৭ দিনে নিজেদের কবজায় থাকায় জিম্মিদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। পাল্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দেড় শোর বেশি মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েলও। হিসাব অনুযায়ী, হামাসের কবজায় এখনো ১৩২ জন জিম্মি রয়েছে।

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top