গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি ইসরায়েল, হামাস

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২০:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত ইসরায়েল ও হামাস। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই কথা জানিয়েছেন। আগামী ১৯ জানুয়ারি, রোববার থেকে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা আছে। চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাস ছয় সপ্তাহ ধরে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমে ওয়ার ক্যাবিনেটের সম্মতি নেবেন, তারপর চুক্তি নিয়ে ভোটাভুটি হবে। তবে তার আগেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এই চুক্তি নিয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য জো বাইডেন ও ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই চুক্তি হলো ঠিক পদক্ষেপ। ইসরায়েলের সেনা ইতিমধ্যেই বন্দিদের মুক্তি পেয়ে ফেরত আসার নাম দিয়েছে, 'উইংস অফ ফ্রিডম'। চুক্তির খবর পাওয়ার পর গাজায় সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের বক্তব্য

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তির জন্য তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। নেতানিয়াহুর অফিস একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ''ট্রাম্প বলেছেন, অ্যামেরিকা ইসরায়েলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে এবং তারা গাজাকে সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হতে দেবে না। নেতানিয়াহু এক জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।''

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''ট্রাম্প ও নেতানিয়াহু শীঘ্রই ওয়াশিংটনে মিলিত হবেন। নেতানিয়াহু বাইডেনের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন। বাইডেন যেভাবে দ্রুত চুক্তি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন, তার জন্য তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।''

নেতানিয়াহুর অফিস জানিয়েছে, চূড়ান্ত চুক্তি অনুমোদনের পরই তিনি এই বিষয়ে বলবেন। তাকে সিকিউরিটি ক্যাবিনেট এবং পূর্ণ মন্ত্রিসভার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। তবে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, ''এই চুক্তি হলো সব বন্দিকে মুক্ত করার ঠিক পথ। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।''

হামাসের বক্তব্য

হামাস জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের মানুষ অবিচল থাকায় এই চুক্তি সম্ভব হলো। এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, ''যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে ফিলিস্তিনের মহান মানুষরা অবিচল থাকার ফলে এবং গত ১৫ মাসে গাজা ভূখণ্ডে আমরা যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম, তার ফলে। এই চুক্তির ফলে আমাদের দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও ঘরে ফেরা নিশ্চিত হবে।'' হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল-সহ অনেক দেশ।

গাজায় মানুষের উচ্ছ্বাস

এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর পাওয়ার পরই গাজায় মানুষ রাস্তায় নেমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তারা একে অপরকে আনন্দে জড়িয়ে ধরেন। রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগে থেকেই উৎসবের আবহ দেখা গিয়েছে গাজার রাস্তায়।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে এই চুক্তির ক্ষেত্রে কাতার ছিল অন্যতম মধ্যস্থতাকারী। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি বলেছেন, ''ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং কিছু বন্দিকে মুক্তি দিতে রাজি হয়েছে।'' তিনি বলেছেন, ''দুই পক্ষ এই যুদ্ধবিরতির কথা ঘোষণা করবে। রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হবে। এই চুক্তির মধ্যে ৩৩ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়ার কথা থাকছে।''

এই চুক্তির রূপায়ণ হলে গাজায় গত ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধ বন্ধ হবে, ইসরায়েলের বন্দিদের একটা অংশও ঘরে ফিরবে। কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছে। আল থানি বলেছেন, ''চুক্তির আগে গাজায় শান্তি বহাল রাখতে হবে। তিনটি মধ্যস্থতাকারী দেশ চুক্তি রূপায়ণের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।'' দোহায় দীর্ঘ ও কষ্টকর আলোচনার পর এই মতৈক্যে পৌঁছানো সম্ভব হলো।

অ্যামেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। তিনি জানান, ''আমি গত মে মাসে চুক্তির যে কাঠামোর কথা বলেছিলাম, সেই কাঠামো অনুযায়ী চুক্তি হয়েছে।"

বাইডেনের দাবি, ''এই চুক্তি শুধুমাত্র হামাসের উপর অসম্ভব চাপ বা লেবাননে রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল এবং ইরানের দুর্বল হয়ে পড়ার জন্য হয়নি, এর পিছনে অ্যামেরিকার কূটনীতিকদের কষ্টকর প্রয়াসও রয়েছে।'' তিনি বলেছেন, ''আমার কূটনীতিকরা কখনই তাদের প্রয়াস থেকে সরে আসেননি।''

বাইডেন যখন চলে যাচ্ছেন, তখন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ''এই চুক্তির জন্য কে বেশি কৃতিত্ব পাবেন, আপনি না ট্রাম্প?" বাইডেন জবাব দেন, ''এটা কি রসিকতা করা হলো?"

জাতিসংঘ যা বলেছে

জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, ''গাজায় অবিলম্বে মানবিক ত্রাণ শুরু করতে হবে।যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পরই রাজনৈতিক ও সামরিক বাধা চলে যাবে, ফলে আমরাও গাজার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে পারব।''

ইউনিসেফ বলেছে, ''এই চুক্তি অনেকদিন ধরে বকেয়া ছিল। এই যুদ্ধের ফলে গাজার শিশুদের অবস্থা শোচনীয় হয়েছে। অন্ততপক্ষে ১৪ হাজার পাঁচশ শিশু মারা গেছে, কয়েক হাজার আহত হয়েছে, ১৭ হাজার তাদের পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্ন, ১০ লাখ গৃহচ্যূত।'' সূত্র: ডয়চে ভেলে



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top