গাজায় ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ইসরায়েলি সেনাদের হামলা, দুই দিনে নিহত ১১৭
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২৫, ০৯:০৭
 
                                        ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসনিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় আজ শনিবার (৭ জুন) ঈদের দ্বিতীয় দিনেও গাজায় বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় একই পরিবারের ১৬ জনসহ কমপক্ষে ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ঈদ ও ঈদের পরদিন মিলিয়ে অন্তত ১১৭ জন নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বোমা হামলায় এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ধ্বংসস্তূপের নিচে ৮০ জনের বেশি মানুষ আটকা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববার (৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় আল-জাজিরা।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও অঞ্চলের মতো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ঈদুল আজহা ছিল ৬ জুন। তার পরের দিন ৭ জুন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং এই ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন শিশুও রয়েছে। এই পরিবারটি বসবাস করত গাজার প্রধান ও মধ্যাঞ্চলীয় শহর গাজা সিটির সাবরা এলাকায়।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আল জাজিরাকে বলেছেন, শনিবার গাজা শহরের সাবরা পাড়ায় একটি বাড়িতে হামলার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ‘কোনো সতর্কতা’ দেয়নি।
“এটা ছিল পুরোপুরি ঠান্ডা মাথায় গণহত্যা। শনিবার যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সবাই বেসামরিক এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু আছেন” বলেন তিনি।
এদিকে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তাদের অভিযানের লক্ষ্য ছিল আসাদ আবু শারিয়া নামে মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধানকে নিধন করা। আসাদ আবু শারিয়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে যে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল হামাস, তাতে অংশ নিয়েছিলেন।
এর আগে ঈদের দিন, অর্থাৎ ৬ জুনও দিনভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং তাতে নিহত হয়েছিলেন অন্তত ৪২ জন।
টেলিগ্রামে শেয়ার করা এক বিবৃতিতে হামাস হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে যে, আবু শরিয়ার ভাই আহমেদ আবু শরিয়াও এই হামলায় নিহত হয়েছেন।
এদিকে শনিবার ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ গাজার রাফায় মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত একটি ত্রাণ বিতরণ স্থানের কাছে অপেক্ষারত কমপক্ষে আট ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামাসকে উৎখাত আর তাদের কবল থেকে জিম্মি উদ্ধারের নামে ইসরায়েলের নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চলছেই। প্রতিদিনই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা; দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। নিরাপদ বলে কোনো স্থান বাকি নেই গাজাবাসীর জন্য। একদিকে আকাশ ও স্থল অভিযান, অন্যদিকে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ; গাজা যেন সাক্ষাৎ নরক হয়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জন্য।
গত ১৭ মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালানোর পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং খাদ্য, সুপেয় পানি, ও ওষুধের অভাবে নরকের জীবনযাপন করছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা।
যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
বিষয়:

 ভিডিও
                                        গ্যালারী
 ভিডিও
                                        গ্যালারী 
                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                    
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।