পাবনায় অসহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য প্রতি রাতে সাহরির আয়োজন

পাবনা থেকে | প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৪:৩৫

পাবনায় অসহায় ছিন্নমূল মানুষের জন্য প্রতি রাতে সাহরির আয়োজন

পবিত্র রমজানে প্রতি রাতে পাবনায় অন্তত ৩’শ অসহায় মানুষের মাঝে সাহরির জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন পাবনার একদল যুবক।

গত দুই বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসে পাবনা সদর হাসপাতালের রুগী, শহরের ভাসমান অসহায় মানুষ, রাত্রিকালীন রিকশা চালক, নৈশপ্রহরীসহ শহরে ঘুরে বেড়ানো মানসিক ভারসাম্যহীনদের মধ্যে সাহরির জন্য খাবার বিতরণের কাজটি করছে ‘তহুরা-আজিজ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।

এ মহতী কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম। তিনি কল্যাণমূলক কাজ করার জন্য তার বাবা-মায়ের নামে গড়ে তুলেছেন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন। উচ্চ শিক্ষিত দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক দেওয়ান আজিজুল ইসলামের ছেলে।

দেওয়ান মাহবুবুল ইসলাম জানান, গত বছর করোনার কারণে রাতে দোকানপাট বন্ধ থাকত। এতে হাসপাতালে থাকা রোগীর স্বজনেরা সাহরির খেতে পারতেন না। এমন এক প্রেক্ষাপটে হাসপাতালে সাহরির খাবার বিতরণ শুরু করে সংগঠনটি। এক পর্যায় দেখা গেলো, নৈশপ্রহরী, শ্রমিক, শহরে ঘুরে বেড়ানো ছিন্নমূল অসহায় বহু মানুষ সাহরির খাবার জোগাড় করতে পারেন না। অনেকেই না খেয়ে রোজা রাখেন। এ কারণে এ কার্যক্রমের কলেবর বৃদ্ধি করে তাঁদেরও সাহরির দিতে শুরু করে। কয়েকজন কে সাথে নিয়ে দেওয়ান মাহবুবুল মাঝ রাতে বেড়িয়ে পরেন। কারণ খাবার প্যাকেট পৌঁছে দিতেও বেশ সময় লাগে। প্রতিদিন তার সহযোগীদের সঙ্গে করে রান্না করেন এবং ৩০০ প্যাকেট তৈরি করেন। তবে চাহিদা আরো বেশি। তবে তাদের সামর্থ অনুযায়ী ৩০০ প্যাকেট তৈরি করতে পারছেন। এরপর ঘুরে ঘুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, মধ্য শহরের আবদুল হামিদ সড়ক ও অনন্ত বাজার এলাকায় প্রতি রাতে সাহরির খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন আমেনা বেগম, বৃষ্টি খাতুন, রেবেকা,জান্নাতিসহ কয়েক জনের সাথে কথা হয়। তারা জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জন্য খাবার দেয়া হলেও সাথে থাকা স্বজনদের কোন খাবার দেওয়া হয় না যে কারনে সাহরির সময় খাওয়া হয় না। কেউ চাটমোহর, কেউ ঈশ্বরদী, বেড়াসহ বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রাম থেকে আসায় সাহরির খাবারে খুব কষ্ট হয়। বিনামুল্যে সাহরির খাবার দেয়ায় হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর স্বজনদের রোজা রাখতে আর কোন সমস্যা হচ্ছে না।

স্বেচ্ছাসেবক তৌহিদুর রহমান ও রাইসুল ইসলাম বলেন, সংগঠনের নিজস্ব অর্থায়ন ও শহরের কিছু মানুষের সহযোগিতায় কার্যক্রমটি চলছে।

অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের পরও খাবার তালিকায় ভাতের সঙ্গে দিনভেদে থাকে মাছ, মাংস ও ডিম। প্রতি প্যাকেট খাবার সরবরাহ করতে গড়ে খরচ হচ্ছে ৫০ টাকা। ছাত্র, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ১২ জন স্বেচ্ছাসেবক এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বাজার করা থেকে শুরু করে, রান্না, খাবার প্যাকেট ও মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া পুরো কাজটি তাঁরাই করেন।

তারা আরো বলেন, আরো কিছু মানুষ যদি ফাউন্ডেশনের পাশে এসে দাঁড়াতো তাহলে তারা আরো বেশি মানুষকে খাবার দিতে পারতেন। তারপরও তারা চেষ্টা করছেন পুরো রোজার মাসে এসব অসহায় মানুষদের মুখে একটু ভালো মানের সাহারির খাবার তুলে দিতে। পাশাপাশি আসন্ন ঈদ উপলক্ষে অসহায় মানুষদের সাহায্য করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

ফাউন্ডেশনের পরিচালক দেওয়ান মাহবুবুল আরো বলেন, আমাদের কার্যক্রম শুধু মাত্র রমজান সেহরীর খাবার বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশন থেকে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন ১৫০ জন করে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ ওষুধ দেয়া হয়। এছাড়াও ৪০টি নারীকে সেলাই মেশিন, ৫০টি নলকূপ স্থাপনসহ অসহায়দের হাস-মুরগী, ছাগল, করোনা রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার, আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের গোসল, দাফন ও কাফনসহ নানা ধরণের সামাজিক কর্মকান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আমাদের সাধ অনেক, তবে সাধ্য কম। জীবনে যত দিন বেঁচে থাকবো স্বেচ্ছাসেবকদের শ্রম ও কিছু মানুষের সহযোগিতায় আমরা এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

এনএফ৭১/আরআর/২০২২




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top