ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির ২৫ বছর পূর্তি আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৫৭
পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫ বছর পূর্তি আজ (২ ডিসেম্বর)। ১৯৯৭ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বিরাজমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়।
সরকারের পক্ষে জাতীয় সংসদের তৎকালীন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও উপজাতীয়দের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা এ চুক্তিতে সই করেন। শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে শান্তি চুক্তি হলেও ২৫ বছরে স্বস্তি ফেরেনি সেখানে।
প্রত্যাশা এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে উল্লেখ করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ সব প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন। তারা জানান- এখনও মাঝেমধ্যে অশান্ত পার্বত্য অঞ্চল। প্রতিনিয়ত ঘটছে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত ও গুম, অপহরণ, চাঁদাবাজি।
এ বছর ব্যতিক্রমী আয়োজনে শান্তির দিবসটি উদ্যাপন করবে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। পাহাড়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলো খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ছাড়াও চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় একাধিক কর্মসূচী নিয়েছে।
এই চুক্তি সম্পাদনের পর পাহাড়বাসীর মধ্যে প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দুটি বিষয়ই রয়েছে। এককথায় একদিকে নানা ঝামেলা অন্যদিকে বিরুদ্ধ পক্ষের বিরোধিতার কারণে শান্তি চুক্তির এখনও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও বদলে গেছে পাহাড়ের চিত্র। অচিন্তনীয় উন্নয়ন হয়েছে পাহাড়ের তিন জেলায়। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। দেশ যেমন এগিয়ে যাচ্ছে এর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে সবুজের পাহাড়ও এগিয়ে যাচ্ছে। গহীন অরণ্যেও মোবাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক পাহাড়বাসীর জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। এ ছাড়া সরকারী বিভিন্ন খাতে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন রয়েছে তেমনি বেসরকারী পর্যায়েও থেমে নেই। এসবের মধ্যেও তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে আজ এদিনটি পালন করবে।
সবচেয়ে দুঃখজনক সত্যটি হচ্ছে পাহাড়ে পাহাড়ীদের ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষের যে সূত্রপাত ঘটেছে তার অবসান হয়নি। এদিকে সরকারের দাবি শান্তি চুক্তির অধিকাংশ শর্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। অপরদিকে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির দাবি হচ্ছে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ধীরে চলো নীতি রয়েছে। আর এ কারণেই স্থায়ী শান্তি এখনও ফিরে আসেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৬ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাহাড়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে দফায় দফায় সংলাপের পর এই দিনে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বর্তমান সরকার বিগত ২৪ বছরে শান্তি চুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্পন্ন করেছে। অবশিষ্ট ১৫টি ধারা আংশিক এবং ৯টি ধারা বর্তমানে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আবার এর মধ্যে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রয়েছে। তবে শান্তি চুক্তির আংশিক ও অবাস্তবায়িত ধারাসমূহ বাস্তবায়নে সরকার পক্ষ আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে দাবি করেছে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের যেমন অবসান ঘটেছে তেমনি এর পর থেকে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামোগত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।