মুন্সীগঞ্জে পাসপোর্ট অফিসের বাহিরে কম্পিউটার দোকান আড়াঁলে দালাল সিন্ডিকেট
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪:৫৭
মুন্সীগঞ্জে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু ১৫-২০ টি কম্পিউটারের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব কম্পিউটার দোকানকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দালাল ও কম্পিউটার মালিকদের নিয়ে একটি দালাল সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন গ্রহকদের হয়রানি।দোকানগুলোতে প্রথমে অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ ও ব্যাংকে সরকারি ফি জমা দেওয়ার কাজ করা হয়।
বেশির ভাগ কম্পিউটার দোকানের আড়াঁলে দালালদের একেকটি চেম্বার। আবেদনের ৭৬ নম্বর কলামে সংশ্লিষ্ট দালালের নাম বা ছদ্মনামের একটি ই-মেইল উল্লেখ থাকে। বর্তমানে এটাই সংকেত।
আবেদনকারীরা কাউন্টারে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্তরা আগে পাতা উল্টিয়ে সংকেত আছে কিনা দেখেন। সংকেত থাকলে সব ঠিক, না থাকলে ভুল ধরে ফেরত দেওয়া হয়।
বেশ কিছু কম্পিউটার ব্যবসায়ী বলেন, পাসপোর্টের আবেদন ফরম বর্তমানে অনলাইনে পূরণ করতে হয়। ফরম পূরণ করার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা জমা নেয়। টাকা জমা দিয়ে ঘুষ না দিয়ে কেউ অফিসে গেলে পড়তে হয় ভোগান্তিতে। মা-বাবার আইডি কার্ডের সঙ্গে আবেদনকারীর আইডি কার্ডে অক্ষর কিংবা যতি চিহ্নের মিল না থাকলেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় আবেদনকারীকে।
নতুন বা নবায়ন সংক্রান্ত সাধারণ আবেদনে এক হাজার টাকা, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদনে ছয় হাজার টাকা ও জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ১৮ বছরের কম বয়সীদের আবেদনে দুই হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। দালালরা অফিস সময় শেষে কর্মচারীদের হাতে টাকা বুঝিয়ে দেন এমন অভিযোগ উঠেছে গ্রহকদের কাছে ।
মুন্সিগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক, মোহাম্মদ কামাল হোসেন খন্দকার বলেন, কম্পিউটার দোকান ব্যবসায়ীরা পাসপোর্ট অফিসের বাহিরে অবস্থিত। তবে জনগুরুত্বপূর্ন এই অফিসটিকে জনবান্ধব করতে আমি সব সময় চেস্টা করে আসছি হয়রানি দুর্নীতি মুক্ত। এটি এমন এক অফিস সেখানে প্রতিদিন সমাজের নিচু থেকে উচু সকল শ্রেণির মানুষকে আমাদের সেবা দিতে হয়।
তাই কেউ একটি বিষয়ে সহজে বুঝতে পারেন আবার অনেককেই একটি বিষয় বার বার সহজ করে বুঝিয়ে দিতে হয় এটাই তো এই অফিসের দায়িত্বরত সকলের প্রধান দায়িত্ব। বিরক্ত হয়ে কাউকে কটু কথার মাধ্যমে কষ্ট দিলে পরে তা আমার বুকের মধ্যে প্রচন্ড ব্যথা দেয় তাই আমি সাধ্যমতো চেস্টা করি আমার কাছে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা শত শত সেবাগ্রহিতাদের একটু ভালোবাসার মাধ্যমে সেবা দিতে।
এছাড়া আমি আমার কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই পুরো অফিসটি পর্যবেক্ষন করার চেস্টা করি। কোথাও কোন ভিড় চোখে পড়লে আমি নিজে সেখানে গিয়ে সমস্যা সমাধান করার চেস্টা করি। এছাড়াও আমি প্রতিদিন কোন এক সময় পুরো অফিসের সকল কিছু সরেজমিনে গিয়ে পর্যবেক্ষন করি।
তিনি আরো বলেন, ৩১ মে ২০২৩ বর্তমান কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকেই অফিসটিকে দালাল মুক্ত করে ভোগান্তি আর হয়রানী বিহীন সেবা প্রদানের এক আদর্শ জায়গা হিসেবে তৈরিতে কাজ করে আসছেন। তবে অনেক মানুষই ভয়ে অফিসে না এসে অন্য মানুষদের প্ররোচনায় পড়ে বেশি টাকা খরচ করেন।
তাই আমি জেলাবাসীর কাছে একটি বার্তা পৌছে দিতে চাই যে পাসপোর্ট সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে যে কোন মানুষ সরাসরি আমার কক্ষে চলে আসবেন। কাউকে তেল মাখাতে হবে না, কাউকে ধরতে হবে না কাউকে একটি টাকা কিংবা এককাপ চা-ও খাওয়াতে হবে না।
সরকারি অফিসে যে কোন মানুষ এসে ভোগান্তি, হয়রানী ও বিড়ম্বনা ছাড়াই সেবা পেতে পারেন সেই ধারা এবং ধারনাটি আমি এই পাসপোর্ট অফিসে প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। তবে দিন দিন পাসপোর্টের চাহিদা যে ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই ক্ষেত্রে জনবল সংকট পূরণ করা গেলে এই সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।
মুন্সিগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, আমি এ বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসারের সাথে আলাপ করবো এর আগেও তাকে ডেকে বলা দেওয়া হয়েছে যারা দালাল দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইননুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।