ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রিদের বিক্ষোভ
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪৯
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় রানিং স্টাফরা কর্মবিরতিতে যাওয়ায় ট্রেন স্টেশনে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল থেকে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এদিকে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির ঘোষণার পর থেকে স্টেশন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
অপরদিকে অধিকাংশ যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ ধরে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকায় ও গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ট্রেন না পাওয়ায় তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
এদিকে ট্রেন বন্ধ পেয়ে রাজশাহী রেলস্টেশনে বিক্ষোভ করেছেন যাত্রীরা। টিকিটের টাকা ফেরতের জন্য তারা স্টেশনে ভাঙচুরও চালান। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে নগরীর শিরোইল এলাকায় রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত স্টেশনে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন গন্তব্যে গমনেচ্ছু যাত্রীরা। এরপর তারা টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে ভাঙচুর চালান। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা ট্রেনে টিকিট পরীক্ষকদের (টিটিই) একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। যাত্রীরা স্টেশনে পেতে রাখা কিছু চেয়ারও ভাঙচুর করেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে ফিরে যান যাত্রীরা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টহল দেন সেনাসদস্যরা।
রাজধানীর কমলাপুরসহ সারাদেশের রেলস্টেশনগুলোতে দেখা মিলেছে অপেক্ষমান যাত্রীদের ভোগান্তির চিত্র। অনেকে ফিরে গেলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে দেখা গেছে প্রায় সবাইকে। হট্টগোলও বেঁধেছে কিছু স্টেশনে। এমনকি ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটিয়েছেন কোনো কোনো স্টেশনের যাত্রীরা। রাজশাহী রেলস্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
মলাপুর রেলস্টেশনে সরেজমিনে গিয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই স্টেশনে অপেক্ষা করছেন তাদের অনেকে। স্টেশনে আসা কেউই জানতেন না ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাই কাউন্টারে এসেই পড়তে হয় বিপাকে। শীতের মধ্যে পরিবার নিয়ে আসা যাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।
চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যোগাযোগ করা হলে ম্যানেজার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, রার্নিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি এবং কোনো ট্রেন আসেনি। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সকাল ৬টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টলা, ৭টায় কক্সবাজারগামী স্পেশাল, সাড়ে ৭টায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস, ৭টা ৪০ মিনিটে সাগরিয়া এক্সপ্রেস ও ৭টা ৫০ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রার্নিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে এসব ট্রেন গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, রার্নিং স্টাফরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে সকাল থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন গন্তব্যে ছেড়ে যায়নি। কর্মবিরতি পালনকারীদের সঙ্গে এখনও আলাপ-আলোচনা চলছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা রার্নিং স্টাফরা রাত ১২টা থেকে কর্মবিরতি পালন করছি। এ কারণে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমাদের সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তা বা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের দাবি মেনে নিলেই শুধুমাত্র আমরা কাজে যোগ দেবো। এ ছাড়া আমাদের এখন আর কিছু করণীয় নেই।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।