বৃহঃস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫, ২১ ফাল্গুন ১৪৩১

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি স্থগিত

বার্তাকক্ষ | প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৩

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি স্থগিত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (এফইসি) কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করেছে। তবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ না করে স্থগিত করায় অসন্তুষ্টির প্রকাশ করেছেন বিক্ষোভকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বোর্ডে নোটিশ টানিয়ে এ তথ্য জানায়। এর আগে গত ১ মার্চ কলেজে ছাত্রদলের কমিটি দেওয়ার পর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়া শিক্ষার্থীদের অবাঞ্ছিত এবং বহিষ্কারেরও দাবি তুলেছেন তারা।

জানা গেছে, গত ১ মার্চ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশনা দিয়ে কলেজের সিভিল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাসেলকে সভাপতি এবং মো. আব্দুল আউয়ালকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি ইব্রাহিম খলিল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আসিফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এডিসন চাকমার নাম রাখা হয়।

এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কলেজে রাজনীতি বন্ধের দাবিতে টানা তিন দিন বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলেজে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিতের নোটিশে স্বাক্ষর করেন অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. আলমগীর হোসেন।


কলেজ সূত্রে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট কলেজের একাডেমিক কাম-প্রশাসনিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে নোটিশ জারি করেন তৎকালীন অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান। নিষিদ্ধের মধ্যে দিয়ে নতুন করে গত ১ মার্চ ছাত্রদলের কমিটি গঠনের খবর প্রকাশ হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে মঙ্গলবার বিকালে একাডেমিক কাম প্রশাসনিক কাউন্সিলের জরুরি সভা ডাকে কলেজ প্রশাসন। পরে সন্ধ্যায় এক নোটিশে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করা হলো। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে।

কলেজ ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ না করে স্থগিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাধারণ শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ বলেন, আমরা চেয়েছিলাম নিষিদ্ধ, কিন্তু প্রশাসন সেটা করেছে স্থগিত। এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। তিনি বলেন, ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার পর থেকে বহিরাগতরা মহড়া দিতে থাকে।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কাজী সুরাইয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, তিন দিন আগে আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু ছাত্র ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকে বহিরাগতরা এসে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। তারা পুরো ক্যাম্পাসে এসে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছেন। মেয়েদের হলের সামনেও তারা আড্ডা দিচ্ছেন। এর পরিত্রাণ কোথায়? আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানাই।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, যদি ক্যাম্পাসে আবারও সেই রাজনীতি ঢুকে পড়ে তাহলে আমরা কেন ৫ আগস্ট করলাম? যারা ছাত্রদল গঠন করেছেন তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হোক এবং হল থেকে বহিষ্কার করা হোক। ক্যাম্পাসে কোনো ছাত্র রাজনীতি চলবে না। সদ্য ঘোষিত ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাসেল কালবেলাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, তখন আমরা ছাত্ররা কেন রাজনীতি করতে পারব না? আমাদের ক্যাম্পাসের তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা শাখার কমিটিতে রয়েছে। তারা যেহেতু রাজনীতি শুরু করেছে শিক্ষার্থীরাও রাজনীতি করবে।

সদ্য ঘোষিত কলেজটির ছাত্রদলের সভাপতি মো. রাসেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে যারা অবস্থান কর্মসূচি করছেন, তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছাত্রলীগের দোসর। বৈষম্যবিরোধী কমিটির তিনজন এবং শিবির ও আওয়ামী লীগের দোসররা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলেছেন। এ ছাড়া বহিরাগতদের নিয়ে কোনো মহড়ার ঘটনা ঘটেনি।

রাসেল আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদলের নেতারা যখন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন তখন আমরা সাধারণ ছাত্ররা কেন রাজনীতি করতে পারব না? আমাদের ক্যাম্পাসের তিনজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা শাখার কমিটিতে রয়েছেন। তারা যেহেতু রাজনীতি শুরু করেছেন, শিক্ষার্থীরাও রাজনীতি করবেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top