তক্কক প্রতারকদের বিরুদ্ধে র্যাবের কাছে অভিযোগ এলাকাবাসীর
সুনামগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১৬:১৪
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর সীমান্ত এলাকায় তক্কক প্রতারকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এলাকাবাসীসহ প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা। স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রতারক চক্র।
এই প্রতারকদের দ্বারা প্রতিনিয়তই কোন না কোন মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রতারণার সাথে জড়িত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্যও।
স্বরূপগঞ্জ গ্রামের ব্যবসায়ী কামাল জানান, কয়দিন আগে যারা মানুষের বাড়িতে গরু রাখালের কাজ করতো এখন তারা কোটি পতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তক্ককের চটকদার ভিডিও পাঠিয়ে পাগল বানিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। এদের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা মুখ খোলার সাহস পায় না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ, বিজিবি কিংবা ডিবির কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। উল্টো অভিযোগকারী হয়রানীর শিকার হন।
আমরা এ ব্যাপারে কাহারও নাম উল্লেখ করতে অসুবিধা আছে। কারণ আমরা এলাকায় বসবাস করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গোপনীয়ভাবে তদন্ত করলে প্রতারণার সাথে কে বা কারা জড়িত তাদের নাম বেরিয়ে আসবে। মাছিমরপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রুমান জানান, আমাদের এলাকাটি নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতারক হিসেবে বাহিরের এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। যারা এ ধরনের প্রতারণার সাথে জড়িত তাদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা না ধরে সাধারণ মানুষকে হয়রানী করে। আমরা চাই র্যাব যেন তদন্ত করে তক্কক প্রতারণার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্বরূপগঞ্জ গ্রামের ইকরাম, মানিক, লোকমান, আবু তাহের, পশ্চিম স্বরুপগঞ্জ গ্রামের জহুর মিয়া, রফিকুল, মজিবুর, মহেন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুর রশিদ, সোনাতলা গ্রামের কুতুব উদ্দিন, আবু তাহেরসহ নাম না জানা অনেক যুবকই তক্কক প্রতারণা ব্যবসার সাথে জড়িয়ে আছে।
ঢাকা থেকে এসে প্রতারণার শিকার হাবিব মিয়া জানান, আমাকে সাড়ে ১৫ ইঞ্চি তক্কক দেয়ার কথা বলেন এবং নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে তক্কক না দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে পালিয়ে যায় চিনাকান্দি বাজারের পার্শ্বে মানিক মিয়া নামের এক প্রতারক। টাকা নেয়ার পর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমার মত অনেক মানুষ ঢাকা থেকে এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ প্রতারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
স্থানীয় যুবক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, পুলিশ, বিজিবি, ডিবি পুলিশ ও সাংবাদিকরাও তক্কক প্রতারক ইকরামের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা শুনেছি। ইকরাম হচ্ছে এলাকার সবচেয়ে বড় ক্যামিস্ট ও প্রতারক চক্রের হোতা। আগে ছিল এলাকার দুই মেম্বার। বর্তমানে তারা প্রতারণা বন্ধ করে দিয়েছে। গুইসাপকে রং দিয়ে ১৮-১৯ ইঞ্জি দেখিয়ে ভিডিও পাঠিয়ে তক্কক ক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। টাকা নেয়ার পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।
তক্কক প্রতারক ইকরাম জানান, আমি কাহারো বাড়ীতে গিয়ে টাকা নিয়ে আসি না। আমাকে তারা টাকা দেয় বিধায় আমি নেই। আর আমি বর্তমানে এ প্রতারণার সাথে জড়িত নই।
এলাবাসীর দাবী, একমাত্র র্যাব সংস্থাই পারে সঠিক তদন্ত করে তক্কক প্রতারণার সাথে যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে এবং এই প্রতারণার বন্ধ করা দরকার। এ ব্যাপারে র্যাব-৯, সিপিসি-৩ সুনামগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ জানান, তক্কক প্রতারকদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনএফ৭১/জেএস/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।