রংপুরে অ্যানথ্রাক্সের ছোবল
দুই মাসে দুই শতাধিক গরুর মৃত্যু, আক্রান্ত অর্ধশতাধিক মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৮

রংপুর জেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে পশুবাহিত প্রাণঘাতী অ্যানথ্রাক্স রোগ। গত দুই মাসে এই রোগে মারা গেছে দুই শতাধিক গরু এবং আক্রান্ত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই গবাদিপশুর মাংস কাটা ও রান্নার সময় সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে জেলার পীরগাছা, মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায়। শুধু পীরগাছাতেই দেড় লাখের বেশি পশু আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
পীরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একরামুল হক বলেন,
“এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, কিন্তু আরও ৫০ হাজার টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। টিকা সংকট থাকায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।”
গরু ও মানুষের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ও টিকা সংকট দেখা দিয়েছে। যদিও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ দাবি করছে, পর্যাপ্ত ওষুধ ও টিকা মজুত আছে।
মিঠাপুকুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন বলেন,
“এই রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। টিকা দেওয়া হচ্ছে, তবে সংকট প্রকট।”
জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুজন—মাইটাল এলাকার কৃষক আব্দুর রাজ্জাক এবং আনন্দী ধনিরাম গ্রামের গৃহবধূ কমলা বেগম। উভয়েই আক্রান্ত গরুর মাংস কাটাকাটি ও রান্নার সময় সংক্রমিত হন।
পরে দেখা যায়, ওই মাংস কাটা ও রান্নায় অংশ নেওয়া অনেকের শরীরেও একই ধরনের ঘা ও উপসর্গ দেখা দেয়।
মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (রোগনিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন,
“অ্যানথ্রাক্স গবাদিপশুর রক্ত, লালা বা মাংসের সংস্পর্শে এলে মানুষে সংক্রমিত হয়, কিন্তু মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। অসুস্থ গরু জবাই বা মাংস খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেল জানান,
“অতিরিক্ত ৫০ হাজার টিকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে।”
জেলা সিভিল সার্জন শাহিন সুলতানা বলেন,
“তিন উপজেলায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। জনগণকে অসুস্থ গরু জবাই না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও টিকা সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।”
প্রাণিসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শুরুতে আক্রান্ত গরু কম দামে বিক্রি করে দেয় কিছু খামারি। পরে গ্রামবাসীরা সেই গরু জবাই করে মাংস রান্না করেন—এভাবেই রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
রংপুর ছাড়াও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, এবং কুড়িগ্রামের চিলমারী, উলিপুর ও রাজারহাটে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ।
- বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
অসুস্থ বা মৃত পশু জবাই বা মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন।
সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।