গোপালগঞ্জে ফুটির বাম্পার ফলনে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে
গোপালগঞ্জ থেকে | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১, ২৩:১২
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চকপুকুরিয়া গ্রামের মালতি হালদার। স্বামী স্বপন হালাদার পেশায় একজন কৃষক। ঘরে রয়েছে ৯ শ্রেনী পড়ুয়া এক ছেলে ও ৮ম শ্রেনী পড়ুয়া এক মেয়ে। এ বছর নিজ হাতে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে করেছেন ফুটি চাষ। ফলনও হয়েছে ভাল। তবে দাম নিয়ে সংশয়ে থাকলেও এবছর ভাল দাম পাওয়ায় মুখে ফুটেছে হাসি।
কৃষাণী মালতি হালদার বলেন, গত বছর করোনা ও লকডাউনের কারনে ফুটি বিক্রি করতে পারিনি। এতে ক্ষেতের ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ায় ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়েছিল। তবে এবছর আগাম চাষ করার পাশাপশি ভাল দামে বিক্রি করতে পারায় গত বছরের লোকসান ওঠার পাশাপাশি লাভ ভাল হয়েছে। তার মতই এবছর লাভবান হয়েছে কোটালীপাড়া উপজেলার কয়েক হাজার ফুটি চাষী।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ৬’শ হেক্টর জমিতে ফুটি বা বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। সময় মত বীজ-সার পাওয়ার সাথে সাথে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ফুটির (বাঙ্গি) বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম চাষ করায় লাকডাউনের আগে বিক্রি করতে পারায় এবং ভাল দাম পেয়ে লাভবান হওয়ায় গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠায় হাসি ফুটেছে কয়েক হাজার কৃষকের মুখে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কোটালীপাড়া উপজেলার তেঁতুল বাড়ি, মাছপাড়া, নলুয়া, বুরুয়া, কুমুরিয়া, চকপুকুরিয়া ও হিজল বাড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে ফুটির চাষ করেছে এ এলাকার কয়েক হাজার কৃষক। এসব গ্রামের কৃষকদের একমাত্র আয়ের উৎস ফুটি চাষ। গত বছর লকডাউনের কারনে বিক্রি করতে না পাড়ায় এ বছর আগাম ফুটির চাষ করে এসব এলাকার কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি সময়মত বীজ-সার পওয়ায় ক্ষেতে ফলনও হয়েছে ভাল।
প্রকার ভেদে এক একটি ফুটি (বাঙ্গি) ৩৫ থেকে ৪০ টাকা এব এক’শ পিস ফুটি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করছেন। এক বিঘা জমিতে ফুটি চাষে কৃষকদের খরচ হয়েছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদে বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে লাভ করছেন কৃষক।
ফুটির মৌসুমকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় গড়ে ওঠেছে আড়ত। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল আড়তে নিয়ে আসেন। পরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে এখাকার ফুটি (বাঙ্গি) কিনে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া অনেক পাইকররা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে জমি থেকেই ফুটি কিনছেন। এ মৌসুমে অন্তত: কয়েক‘শো কোটি টাকার ফুটি বিক্রি হবে এ এলাকায়।
কৃষক অমৃত হালদার, ক্ষিতিশ পান্ডে, বাশার কাজী বলেন, গত বছর ফুটি বিক্রির সময় লকডাউন ঘোষণা করার কোন ফসলই বিক্রি করতে পারি নি। এতে ক্ষেতে ফসল ক্ষেতেই নষ্ট হওয়ায় লোকসান দিতে হয়েছিল। এবছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাম ফুটির চাষ করেছি। এতে ভাল ফলন পাওয়ার সাথে সাথে বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। এতে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
কৃষক শংকর হাজরা, দীপঙ্কর রায় বলেন, এবছর ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। এতে গাছ মারা না যাওয়া ফলন ভাল পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন পাইকরা এসে ফুটি কিনে নিয়ে যচ্ছে। দাম ভাল পাওয়ায় আমাদের লাভও ভাল হচ্ছে।
বরিশাল জেলার বানরীপাড়ার পাইকার বাদশা মিয়া বলেন, এখনকার উপাদিত ফুটি সুস্বাদু ও ভাল হওয়া এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এখানে থেকে আমরা পিস হিসাবে ফুটি কিনে থাকি। পরে এগুলো ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকি।
কালিগঞ্জের আড়তদার প্রদীপ বনিক বলেন, গত বছর করোনার কারনে এসব এলাকার কৃষকরা লোকসান দিয়েছিলেন। তবে ভাল ফলন হবার পাশপাশি বিক্রি করতে পারায় পরিস্থিতি এবার ভিন্ন। এবছর কালিগঞ্জে অর্ধশতাধিক আড়ত বসেছে। কৃষকরা তাদের ফুটি জমি থেকে তুলে আড়তে নিয়ে আসছেন। সেখান থেকে পাইকররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবছর কৃষকরা লাভবান হয়েছেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর গোপালগঞ্জে ফুটির বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য এবছর কৃষকদের আগাম ফুটির চাষ ও আগাম বিক্রির জন্য পরামর্শ দিয়েছিল কৃষি বিভাগ। প্রথম দিকে পাইকারা এখানে এসে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বা আড়ত থেকে ফুটি কিনেছেন। তবে আবারও লকডাউন ঘোষণা করায় অ্যাপসের মাধ্যমে কৃষক তার উৎপাদিত ফসল বিক্রি ও পাইকাররা কিনতে পারছেন। এবছর দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
এনএফ৭১/আরএইচ/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।