রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪ আশ্বিন ১৪৩১

লালমনিরহাটে গুজব ছড়িয়ে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মৃতদেহে আগুন

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫১

লালমনিরহাট থেকে:

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে কোরআন অবমানার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েল (৩৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর তার মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এ নির্মম ঘটনাটি ঘটে।

খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গেলে স্থানীয়রা তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। এসময় পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন্ত কুমার মোহন্তসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৭ রাউন্ড ফাঁকাগুলি ছোড়ে পুলিশ।

নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহিদুন্নবী জুয়েল বৃহস্পতিবার বিকেলে সুলতান যোবাইয়ের আব্দার নামে একজন সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তারা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরীফ নামাতে গিয়ে অসাবধনাতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তার পায়ে পড়ে যায়। এ সময় তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল।

বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান যোবাইয়েরকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখে। এসময় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে।

উত্তেজিত জনতা ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের দরজা জানালা ভেঙে জুয়েলকে ও তার সঙ্গি যোবায়েরকে গণপিটুনি দেয়। এতে জুয়েল মারা যায়। পরে মরদেহ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুন ধরিয়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।

বিকেল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দফায় দফায় চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জুয়েলের সঙ্গী সুলতান যোবাইয়েরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে পুলিশ।

এদিকে, নিহত জুয়েলের ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তার পরিচয় শনাক্ত হয়। জানা যায়, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কয়েক বছর আগে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের গ্রন্থাগারিক পদ থেকে চাকরিচ্যুত হন। নিহত জুয়েল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন বলেও জানা গেছে।

রাত সাড়ে ১০টার দিকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার (এসপি) আবিদা সুলতানা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাবের সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পুরো ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তশেষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনএফ৭১/জেএস/২০২০



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top