স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার পাহাড়
সুজন হাসান | প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৪, ১৯:৩২
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণের বিরুদ্ধে কর্মরত চিকিৎসক ও সেবা গৃহীতার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ জুন তাঁর বিরুদ্ধে ৫ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসক রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এদিকে, ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হুমায়ন কাবির মুকুল নামে এক সেবা গ্রহীতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- হাসপাতালে নিম্নমানের সার্জিকেল সামগ্রী ক্রয়, জুনিয়র কনসালটেন্টদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অফিসে অনিয়মিত আসা-যাওয়া, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা, আলট্রাসনোগ্রামের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা, বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ না করে সরকারি অর্থ আত্মাসাত, কর্মস্থলে না এসে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ভুয়া ভাউচারে তেলের বিল উত্তোলন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে ডাক্তারদের ব্লাকমেইল করাসহ ইত্যাদি।
জানা গেছে, ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট কাউনিয়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার শরিফুল ইসলাম শিশির প্রধান অফিস সহকার।
গত মার্চ মাসে স্বাস্থ্য সচিব হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা উপলক্ষে বিভিন্ন রুম রঙ, লাইটিংসহ বিভিন্ন খরচের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রংপুর হতে ৭৫ হাজার টাকা জরুরি বরাদ্দ নিয়ে ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করেন। একই খরচের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রধান অফিস সহকারির যোগসাজশে ডাক্তার, কর্মচারীদের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা তুলেন। পরে তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ নিজেই আত্মসাত করেন।
এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর বিদ্যুৎ, পানির লাইন, ফ্যান মেরামতের জন্য ৫০ হাজার বরাদ্দ নিলেও সেই টাকা খরচ না করে ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ এবং প্রধান অফিস সহকারি সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ক্যাম্পাসে আবাসিক ভবনগুলোতে চলছে আরেক অনিয়ম। আবাসিক ভবনে ডাক্তার-নার্স থাকার কথা থাকলেও প্রধান সহকারি শরিফুল ইসলাম বহিরাগত লোককে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা নিজের পকেটে নিচ্ছেন।
তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যোগদানের পর থেকে সপ্তাহে দু'একদিন অফিস করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধান অফিস সহকারি শরিফুল ইসলাম শিশির। হাসপাতাল ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে,
কর্মকর্তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণের আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন চিকিৎসকরা। তাঁর এমন আচরণে গত এপ্রিল মাসে জুনিয়র কনসালটেন্টসহ ৬ জন চিকিৎসক স্বেচ্ছায় বদলি নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন।
কনসালটেন্ট চিকিৎসকরা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে চিকিৎসকদের হুমকি প্রদান, প্রধান সহকারির দ্বারা কনসালটেন্টদের তদারকি করা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে অনাধিকার চর্চা করে দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি করা, ঠিকাদারের মাধ্যমে নিম্নমানের সার্জারী সামগ্রী ক্রয়ে বাধ্য করা ইত্যাদি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে একটি কক্ষে প্রচুর রোগীর ভিড়। ভেতরে রোগী দেখছেন সেকমো এস এম জোহা। তাঁর সামনে কিছু স্যাম্পল ওষুধ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন কোম্পানীর লোক। আর বাহিরে অপেক্ষমান রোগীরা বলেছেন, ডাক্তার রোগী না দেখে ওষুধ কোম্পানীর লোকের সাথে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাসপাতালের এমন অবস্থার বিষয়ে একজন
কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ভাই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। প্রধান অফিস সহকারি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। আপনাদের কিছু বললে তিনি আমাদের সমস্যা করবেন।
আনীত অভিযোগের বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাদিকাতুল তাহিরিণ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। আমি এখানে যোগদানের পর থেকে অফিস চলাকালীন চিকিৎসকদের বাইরে অযথা ঘোরাফেরা বন্ধ করেছি। এ কারণে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমিও চাই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হোক, তাহলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।'
রংপুর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. এবিএম আবু হানিফ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ৫ জন জুনিয়র কনসালটেন্টের অভিযোগ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। আমি সিভিল সার্জনের সাথে অভিযোগগুলো নিয়ে কথা বলেছি। চলতি সপ্তাহে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।