১৬ বছর কারাভোগের পর ফাঁসির আসামি নির্দোষ সাব্যস্ত

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক:
আট বছর বয়সী এক শিশু হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া একমাত্র আসামি হুমায়ুন কবির  ১৬ বছর ধরে কারান্তরীণ থাকার পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন।আদালতে জেল আাপিলের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন  ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

মামলার এজাহারের অনুযায়ী, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রীটি স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে ছুটির পরও বাড়ি ফিরে আসেনি সে।  পরে অভিভাবকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শিশুটি স্কুলে যায়নি।

এ ঘটনায় প্রথমে থানায় সাধারণ ডায়েরি, পরে লাকসাম থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে বলা হয়, স্কুলে যাওয়ার পথে মাথা ব্যথা নিয়ে শিশুটিকে ওই গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখে তারা। তখন আরও ৫ থেকে ৬ জন ছিল সেখানে।

তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, হুমায়ুন কবির তখন সেখানে এসে সবাইকে তাড়িয়ে দিতে থাকেন। তিনি শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেন। শিশুটিও বলে, সে তার মামার সাথে যাবে।

ঘটনার বছর ৪ জুলাই পেশায় ট্রাক ড্রাইভার হুমায়ুন গ্রেপ্তারের পর সে দিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এইচ এম মোস্তাক আহমেদ হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করে হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী বায়েজিদ জানান, মামলাটিতে শিশুটির বাবাসহ ১২ জন সাক্ষীর কেউই বস্তুনিষ্ঠ সাক্ষ্য দেয়নি। এছাড়া, শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ থাকলেও বিচারের সময় তাকে জেরা করা হয়নি বলে জানান আইনজীবী।

১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিশুটিকে আসামীর তার খালাত বোনের মেয়ে বলা হলেও শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন, তিনি আসামিকে চেনেন না। একইসঙ্গে, শিশুটির মাকে মামলায় সাক্ষী না করায় সংশয় রয়ে যায়।

বায়েজিদ জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শিশুটির মাথার খুলি ভাঙা ছিল বলে উল্লেখ থাকলেও আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জানবন্দিতে লেখা আছে যে, তিনি শিশুটিকে মুখ চেপে ধরে হত্যা করেছেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব অসঙ্গতি রয়েছে। অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দির ক্ষেত্রেও নানা অসামঞ্জস্য থাকায় আদালত তা আমলে নিয়ে হুমায়ুন কবিরকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত।

এনএফ৭১/এমকে/২০২০



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top