দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্য, তবে ২০১৬ সাল থেকে গতি কমে এসেছে: বিশ্বব্যাংক
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮
বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখালেও ২০১৬ সাল থেকে দারিদ্র্য কমার অগ্রগতি দৃশ্যমানভাবে ধীর হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ শীর্ষক সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে—এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও তা ছিল কম অন্তর্ভুক্তিমূলক; ফলে প্রবৃদ্ধির সুফল মূলত ধনী জনগোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে চরম দারিদ্র্য ১২.২% থেকে ৫.৬%-এ নেমে এসেছে। মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭.১% থেকে কমে ১৮.৭%-এ দাঁড়িয়েছে। এই সময়ে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং ৯০ লাখ মানুষ অতি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে।
তবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো—প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত সংকটে আবারও দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কম অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে পড়ে, যার ফলে আয়ের বৈষম্য বাড়ে। কৃষি খাতের উন্নতির কারণে গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাস পেলেও নগর এলাকায় এই অগ্রগতি মন্থর হয়।
২০২২ সালের মধ্যে প্রতি চারজনের একজন শহুরে জীবনে প্রবেশ করেছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে—বিশেষ করে ঢাকার বাইরে।
উৎপাদন খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির অগ্রগতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। এর বদলে কম উৎপাদনশীল খাতে শ্রমশক্তির প্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা শ্রমবাজারে দক্ষতা সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
-
প্রতি পাঁচ নারীর একজন বেকার
-
শিক্ষিত নারীদের প্রতি চারজনের একজনের কর্মসংস্থান নেই
-
১৫–২৯ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের প্রায় অর্ধেক কম মজুরিতে কাজ করছেন
বিশ্বব্যাংক বলছে, কর্মসংস্থানের এই স্থবিরতা দেশের সামগ্রিক শ্রম আয়ে নেতিবাচক চাপ সৃষ্টি করছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন লক্ষাধিক মানুষের দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো প্রবাসী আয়ের সুফল বেশি পেয়েছে।
তবে বিদেশে যেতে ব্যয়বহুল হওয়ায় সচ্ছল পরিবারের সদস্যরা বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যদিকে শহরে স্থানান্তরিত হওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্নমানের পরিবেশে জীবনযাপন করছেন।
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী—
-
সামাজিক সুরক্ষার সুবিধাভোগীদের ৩৫%–ই ধনী পরিবার
-
অতি দরিদ্রদের অর্ধেকও কোনো সুবিধা পায়নি
এছাড়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও সারের ভর্তুকির বড় অংশই পায় তুলনামূলকভাবে ধনী পরিবারগুলো।
বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে চারটি নীতিগত দিককে সবচেয়ে জরুরি হিসেবে চিহ্নিত করেছে—
-
উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি জোরদার করা
-
দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কাজের সুযোগ বাড়ানো
-
আধুনিক প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি
-
শক্তিশালী রাজস্ব নীতি ও কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা
বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সার্জিও অলিভিয়েরি বলেন, জলবায়ু ঝুঁকি শহর-গ্রাম বৈষম্য বাড়াচ্ছে। সঠিক নীতি ও আধুনিকায়নমূলক বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসের গতি পুনরুদ্ধার করতে পারে।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।