ভিন্নধর্মী কন্টেন্ট ও নানান ঢঙয়ের ফুড রিভিউয়ের জন্য বিভিন্ন বয়সের মানুষ 'রাফসান দ্য ছোটভাই'কে পছন্দ করেন। তার পুরো নাম ইফতেখার রাফসান। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে ২০২০ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে পেশা হিসেবে কন্টেন্ট ক্রিয়েশনকেই বেছে নিয়েছেন। ইতোমধ্যেই নাটক ও মডেলিংয়ে তাকে দেখা গেছে। আমন্ত্রণ পেয়েছেন সিনেমায় অভিনয়ের জন্যও।
সম্প্রতি ইউটিউব-এর অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম পেজে রাফসানের ছবি শেয়ার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন এই তরুণ। জানা গেছে, বাংলাদেশি ইউটিউবার হিসেবে ইউটিউবের নিজস্ব ফিডে স্থান পাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। ভিডিও বানানো শুরু করার সময় থেকেই রাফসান চেয়েছেন দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পৌঁছে যেতে। সে পথেই এগোচ্ছেন তিনি।
মাত্র কিছুদিন আগে দেশের ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সেরা শিল্পী, কলাকুশলী ও কনটেন্ট নির্মাতাদের স্বীকৃতি দিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডসের দ্বিতীয় আসর। এই আসরেও রাফসান পেয়েছেন ফুড ও রেসিপি ক্যাটাগরিতে সেরা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে সম্মাননা। মালয়েশিয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্টেক-এর রিভিউ করার জন্য এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন রাফসান।
রাফসান বলেন, 'আমি মূলত ইউটিউবিং শুরু করি ২০১৭ সালে। চ্যানেল ক্রিয়েট হয়েছিল আগেই, কিন্তু কোনো কন্টেন্ট তৈরি করিনি। একদিন ক্লাস শেষে বার্গার কিংয়ে খেতে যাই। বন্ধু একরাম বললো বার্গার নিয়েই একটা কন্টেন্ট বানাতে। ব্যস, বেশিকিছু না ভেবেই শুরু করলাম। সেই বছর মাত্র ৩টা ভিডিও বানাই, এরপর দুই বছরের জন্য বিরতি। পরে নিয়মিত হয়েছি। আমি শুনেছি অনেক ভ্লগাররা পেইড রিভিউ করেন, যেখানে তারা খাবার বা প্রোডাক্ট সম্পর্কে সত্যিকারের মতামত প্রকাশ করেন না। আমি কখনো এমনটা করিনি। খারাপ জিনিসকে খারাপ বলছি, ভালোকে ভালো বলেছি। হয়তো দর্শকরা আমার এই মানসিকতা বুঝতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, আসলে আলাদা করে ফুড ভ্লগার হওয়ার ভাবনা ছিল না। নানারকম ভ্লগ তৈরির করা ভেবেছি। ট্র্যাভেল ভ্লগও করেছি। তবে ফুড রিভিউগুলোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে বেশি।
রাফসানের প্রথমদিককার ভিডিও দেখেই একটি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি তাকে বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। এরপর ধীরে ধীরে মডেলিংয়ে নিয়মিত হন। এসব কাজ নিতান্তই শখ বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য করতে ভালোবাসেন তিনি। একই কথা অভিনয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ভ্লগিংয়ের বাইরে আরও একটি কাজে বেশ এগিয়ে রাফসান। তিনি একজন প্রফেশনাল গেমারও বটে। ২০১১ সাল থেকেই গেমিংয়ের জগতে পা রাখা, এতে প্রভাবক ছিলেন বড়ভাই। অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন তারা। দেশের বাইরেও গেছেন টুর্নামেন্ট খেলতে। তবে বাবা-মা এই ব্যাপারে শুরুতে খুব একটা সমর্থন দেননি। রাফসান বলেন, কম্পিউটারে গেমিং করে অনেক ছেলেরাই আজকাল প্রতিমাসে লাখের বেশি আয় করছে, ফলে এই বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো জরুরি। হয়তো পরিবর্তন আসবে অচিরেই।
শুধু ফুড ভ্লগিং করে ভিন্ন ভিন্ন খাবার উপস্থাপন নয়, অন্যরা যেন ভিন্নধাচের খাবারও উপভোগ করতে পারেন, সেজন্য রাফসানরা চালু করেছেন 'হাবিবি রেস্টুরেন্ট'। কয়েকটি শাখা ও ক্লাউড কিচেন রয়েছে এর। অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় খাবারগুলোর আদলে সাজানো হয়েছে 'হাবিবি'র মেন্যু। এছাড়া দ্য কোকাকোলা কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছেন রাফসান। পাশাপাশি নিজের কন্টেন্টের মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, মিনিসো, ফুডপান্ডা, পাঠাও, এমএসআই, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন, স্প্ল্যাশ ক্লদিং-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রমোশনে কাজ করেছেন।
রাফসান বললেন, নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনপ্রিয় ফুড রিভিউয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে চান। অল্পসময়ের মধ্যেই বড় অঙ্কের সাবস্ক্রাইবার ও প্রতিনিয়ত লক্ষ-লক্ষ ভিউ তাকে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। ফলে তিনি আশা করছেন ভালো ভালো কন্টেন্ট তৈরির মাধ্যমে নিজেকে ও দেশকে বিশ্বদরবারে ভিন্নভাবে তুলে ধরবেন।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।