সালতামামি ২০২৪

সংসার ভেঙেছে সানিয়া, মাহি, জেনিফার, এ আর রহমানের

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৪

ছবি: সংগৃহীত

বিদায়ের পথে ২০২৪৷ নতুন বছর রূপে ২০২৫ সমাগত। সকলে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত৷ বিদায় এবং বরণের এমন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সবাই বিগত বছরকে স্মরণ করছে। পুরাতন বছরের বিদায় আর নতুনের আগমনী নিয়ে সারাবিশ্বেই এখন উৎসবের আমেজ চলছে।

গেল বছরের মতো এ বছরও বিনোদন জগতের জনপ্রিয় তারকাদের জীবনে বেজে উঠেছিল বিচ্ছেদের সুর। আর সেই বিচ্ছেদের সূত্র ধরেই সারা বছরই আলোচনা-সমালোচনায় ছিলেন সেসব তারকারা। ২০২৪ সালে দেশ-বিদেশের কিছু তারকা জুটির বিচ্ছেদ ছিল নেটিজেনদের মুখে মুখে। যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াও বেশ সরগরম ছিল। তেমনি কয়েকজন তারকার বিচ্ছেদের খবর নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

চলতি বছরের প্রাক্কালে হঠাৎই সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয় ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা ও পাকিস্তানি ক্রিকেট তারকা শোয়েব মালিকের বিবাহবিচ্ছেদের খবর। প্রথমে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের তৃতীয় বিয়ের খবর প্রকাশ করেন শোয়েব।

২০ জানুয়ারি পাকিস্তানি টেলিভিশনে অভিনেত্রী সানা জাভেদকে বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসার পরই নেটিজেনরা জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে সানিয়া ও শোয়েবের বিয়ের পরিণতি সম্পর্কে। আর তখনই সানিয়ার বোন আনাম মির্জা চলতি বছর ২১ জানুয়ারি ইনস্টাগ্রামে বিবৃতি দিয়ে জানান, শোয়েব আর সানিয়ার বিবাহবিচ্ছেদ কয়েক মাস আগেই হয়ে গেছে।

ওপার বাংলার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক। তার সঙ্গে পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিচ্ছেদ অনেক হলেও দীর্ঘ আইনি জটিলতা শেষ করে ১০ জানুয়ারি চূড়ান্ত বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটেন তারা। মূলত ২০২১ সালে কাঞ্চন-পিঙ্কির দাম্পত্য কলহের খবর প্রকাশ্যে আসে। পিঙ্কির অভিযোগ ছিল, অভিনেত্রী শ্রীময়ী চট্টরাজের সঙ্গে পরকীয়া রয়েছে কাঞ্চনের। এ অভিযোগকে সত্য প্রমাণ করে পিঙ্কির সঙ্গে আইনি বিচ্ছেদের পরই শ্রীময়ীকে বিয়ে করেন কাঞ্চন।

বলে রাখা ভালো, পিঙ্কি বন্দ্যোপাধ্যায় কাঞ্চনের দ্বিতীয় স্ত্রী। এর আগে অভিনেত্রী অনিন্দিতা দাসকে বিয়ে করেছিলেন কাঞ্চন। সেই বিয়ের পরিণতিও ছিল ডিভোর্স।

২০২৪ সালের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচনের পরপরপরই বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন ঢাকাই সিনেমার নায়িকা মাহিয়া মাহি। ২০১৬ সালে ভালোবেসে পারভেজ মাহমুদ অপুর সঙ্গে ঘর বাঁধেন মাহি। বিয়ের পর সুখেই ছিলেন। তবে সেই সুখ যেন সইলো না তার কপালে।

চিত্রনায়িকার সংসারে বেজে ওঠে বিচ্ছেদের সুর। ২০২১ সালের জুন মাসে দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন মাহি-অপু। পরবর্তীতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে গাজীপুরের ব্যবসায়ী রাকিব সরকারের সঙ্গে সংসার পাতেন এই নায়িকা।

২০২৩ সালের ২৮ মার্চ তাদের কোলজুড়ে আসে পুত্রসন্তান ফারিশ। তবে মাহির এই সংসারও ভেঙে যায় চলতি বছর। ২০২৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন তারা। বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে একাই আছেন মাহি। পাশাপাশি ফারিশের সব দায়িত্বও একা হাতে পালন করছেন এই নায়িকা।

চলতি বছরের ২০ জুলাই স্ত্রী অর্পিতার সঙ্গে সাড়ে নয় বছরের দাম্পত্যজীবনের বিচ্ছেদ হয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত চিত্রনায়ক আরিফিন শুভর। গত ৩১ জুলাই রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক বিবৃতিতে এ খবর জানান তিনি।

শুভ লেখেন, ‘আমি অত্যন্ত দু:খের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি আর অর্পিতা আমরা হয়তো বন্ধু হিসাবেই ঠিক আছি, জীবনসঙ্গী হিসাবে নয়। আমরা গত ২০ জুলাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, বন্ধুত্বটুকু নিয়ে দুইজনের সম্মতিতে বাকী জীবন নিজেদের মত করে বাঁচব।’

২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ফ্যাশন ডিজাইনার অর্পিতার সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন আরিফিন শুভ। অর্পিতার বাড়ি ওপার বাংলা কলকাতায়। তিনি বিয়ের প্রায় আট বছর আগে থেকে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে কলকাতায় ফিরেছেন বলে জানা গেছে।

২০১২ সালের জুন মাসে ডায়মণ্ড ব্যবসায়ী ভরত তখতানির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ধর্মেন্দ্র-তনয়া বলিউড অভিনেত্রী এশা দেওল। ২০১৭ সালে প্রথম সন্তান রাধ্যার জন্ম হয়। এর ঠিক দুবছর পর দ্বিতীয় সন্তান মীরার জন্ম হয়। তবে তাদের সুখের সংসারে হঠাৎই ভাঙনের সুর ওঠে চলতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন তারা।

বিচ্ছেদের কারণ প্রসঙ্গে ভরত কিছু না জানালেও সংবাদমাধ্যমে এশা জানান, শাশুড়ির অসংখ্য আদেশ, নিষেধ মেনে এতদিন সংসার করেছেন। তবে এবার তার আদেশ, নিষেধ চরমে পৌঁছায়, যে কারণে সংসার আর টিকিয়ে রাখতে পারেননি অভিনেত্রী।

চলতি বছরেই বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন মার্কিন অভিনেতা ও প্রযোজক বেন অ্যাফ্লেকের সঙ্গে গায়িকা জেনিফার লোপেজ। ২০০০ সালে এ জুটি প্রথম প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। দীর্ঘ সময় প্রেমের পর ২০০২ সালে করেন আংটি বদল। কিন্তু হঠাৎই তাদের বিয়ে ভেঙে যায়।

এরপর অন্য জীবনসঙ্গীকে সাথে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিতে শুরু করেন তারা। এভাবে তাদের বিচ্ছেদের ২০ বছর পার হওয়ার পর আবারও এ জুটি একে অন্যের প্রেমে পড়েন ২০২২ সালে।

আংটি বদল করে সে বছরই জুলাই মাসে ধুমধাম করে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের দুই বছর পেরোতেই জটিলতা শুরু হয় তাদের মাঝে। বেনের সঙ্গে আর্থিক বিরোধে কোনো আইনজীবী ছাড়া নিজেই আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন জেনিফার। ২০২৪ সালে জুলাই মাস থেকেই তারা আলাদা থাকতে শুরু করেন। এ বিবাহবিচ্ছেদ জেনিফারের জীবনে চতুর্থ এবং বেনের জীবনে দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা।

বলিউডের নৃত্যশিল্পী ও মডেল নাতাশা স্ট্যানকোভিচ ও হার্দিক পাণ্ডিয়ার বিয়েটা প্রেমের বিয়েই ছিল। ২০২০ সালের মে মাসে গাঁটছড়া বাঁধেন দুজন। তবে বিয়ের ৪ বছর পর হঠাৎ দুজনে সম্পর্কের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এ বছর তাদের বিচ্ছেদ সকলকে চমকে দেয়। ভক্তরাও হতবাক হয়ে যান।

২০২৪ সালের জুলাইয়ে তারকা দম্পতি একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তাদের সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অশান্তির গুঞ্জন ছিল। যেটি পরে সত্য প্রমাণিত হয়। এই বিচ্ছেদের পরই তাদের ব্যক্তিগত জীবন বেশ নাটকীয় হয়ে ওঠে।

ঢাকাই সিনেমার নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন ও সংযুক্তা মিশুরও বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এ বছর। মাত্র তিন মাস আগে নিজের বিবাহবিচ্ছেদের খবর প্রকাশ করে হঠাৎই ফেসবুকে নির্মাতা জানান, পারষ্পরিক সমঝোতা ও একে অপরের প্রতি সম্মান রেখে পরিবারের অনুমতিতে বিবাহবিচ্ছেদ করেছেন তিনি।

২০১৪ সালের ৩০ মে দীপন মানিকগঞ্জের মেয়ে সংযুক্তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সংযুক্তা স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। এক নায়িকার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দূরত্ব তৈরি হয় তাদের মধ্যে। এরপর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে আলাদা বসবাস করছিলেন। চলতি বছর সে সম্পর্কের সম্পূর্ণ ইতি টানেন এ জুটি।

বছরের একেবারে শেষদিকে ১৯ নভেম্বর হঠাৎই অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমান ও সায়রা বানু মিডিয়ায় প্রকাশ করেন তাদের বিবাহবিচ্ছেদের খবরটি। বলা চলে চলতি বছরের অন্যতম আলোচিত বিচ্ছেদ এটি। কেননা তাদের এই বিচ্ছেদের খবর এ আর রহমান ভক্তরা যেনো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্য ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে রহমান ও সায়রা সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান, অগাধ প্রেমের অভাব নয়, মানসিক চাপ ও নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক দূরত্ব তৈরি হওয়াতেই তারা হেঁটেছেন বিচ্ছেদের পথে।

এদিকে বিচ্ছেদের খবর একদিন যেতে না যেতেই সুরকারের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে নাম জড়ায় রহমানের দলের বেজিস্ট মোহিনী দে। এ প্রেমের গুঞ্জনকে মোহিনী, সায়রা ও রহমান তিনজনই মিথ্যা বলেছেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top