এরশাদ শাসনামলে আন্দোলন ও কেলেঙ্কারির যেসব খবর ছাপা হতো না
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:২৭
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে নিহত হয়েছিলেন ১৯৮১ সালের ৩০ মে। আর তৎকালীন সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেছিলেন ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। সেই এরশাদের পতন হয় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। এরশাদ শাসনামলের সেই ৯ বছরকে বলা হয় অন্ধকারের দশক।
নানা ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি তো ছিলই, নারীঘটিত ঘটনারও অভাব ছিল না। কিন্তু এর অনেক কিছুই প্রকাশ পেত না। কঠোর সামরিক আইন অনেক খবরকেই আলোর মুখ দেখতে দেয়নি। কোন সংবাদ ছাপা হবে, আর কোনটি ছাপা হবে না, তা ঠিক করে দিত এরশাদের সামরিক সরকার। সামরিক আইন প্রত্যাহারের পরও পরিস্থিতির খুব উন্নতি হয়নি। তবে সংবাদপত্রজগতের প্রতিবাদও ছিল উল্লেখযোগ্য। এরশাদের সেন্সরশিপের প্রতিবাদে পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ রাখার উদাহরণও ছিল।
এরশাদ সেন্সরশিপ বা কোনো খবর ছাপা হবে কি হবে না, তার নির্দেশনা আসত তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অধিদপ্তর বা পিআইডি থেকে। তখন তো টেলিভিশন বা অনলাইন ছিল না। ছিল না সোশ্যাল মিডিয়া। ছিল কেবল সংবাদপত্র। সংবাদপত্র ছাপার কাজ শুরু হতো রাতে। আর তাই রাতেই ফোন আসত পিআইডি থেকে। এর নাম ছিল ‘প্রেস অ্যাডভাইস’।
‘দৈনিক বাংলা’ ছিল তখন সরকারি মালিকানাধীন পত্রিকা। সে সময় একটি রেকর্ড খাতায় সব ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ লিখে রাখা হতো। তখন পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক ছিলেন ফওজুল করিম। তিনি নিজে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটা লিখে রাখতেন। দৈনিক বাংলারই সাবেক কর্মী, বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ এই রেকর্ড খাতাটি সংগ্রহ করে বিশেষ একটি লেখা ছিলেন ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রকাশিত বিশেষ স্মরণিকায়। সেখান থেকে কিছু ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ এখানে উল্লেখ করা হলো।
১৯৮২ সালের ১১ মে পিআইডি থেকে জানানো হয়, সরকারি ছবিগুলো এভাবে ছাপতে হবে (১) সিএমএলএর (প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক বা সিএমএলএ এরশাদ) জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনের ছবি প্রথম পৃষ্ঠায় (২) উপদেষ্টা শাফিয়া খাতুনের ছবি প্রথম পৃষ্ঠায় নিচের দিকে (৩) আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকের ছবি অষ্টম পৃষ্ঠায়।
১৯৮৩ সালের ১২ জুনের নির্দেশ ছিল—সিএমএলএর আজকের সব অনুষ্ঠানের খবরের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাতের খবরটির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এ খবরের শিরোনাম হবে—‘প্রাথমিক শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী ছিলেন এবং থাকবেন: এরশাদ’।
১৯৮৩ সালের ২৯ মে বলা হয়, বিমানবন্দর শুল্ক কর্মকর্তার মারা যাওয়ার খবরটি ছাপা যাবে না। আবার ১৯৮৩ সালের ৭ জুলাই বলা হয়, নিহত বৈমানিকের কুলখানি বা বিমার টাকা পাওয়া যায়নি এ সম্পর্কে কিছুই ছাপা যাবে না।
এরশাদ তখন রাজনীতিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সে সময়কার কিছু ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ ছিল এ রকম—
১৯৮৩ সালের ১৩ আগস্ট বলা হয়, ধানমন্ডি থানা যুবলীগের সহসভাপতি হুমায়ুন কবির মিলনের নেতৃত্বে ২৫ জনের নতুন বাংলা যুবসংহতিতে যোগদানের খবরটি পুরোপুরি ছাপতে হবে।
একই বছরের ১৭ এপ্রিলের নির্দেশ ছিল নতুন বাংলা যুব সমাজ ও ছাত্র সমাজের বিবৃতিটি ভালো করে ছাপতে হবে। ১৯৮৩ সালেরই ৯ আগস্ট বলা হয়, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের (মিলন) সাংবাদিক সম্মেলনের খবরটি ফলাও করে ছাপতে হবে। আবার ২৮ সেপ্টেম্বরের নির্দেশ ছিল ডাকসুর জিএস শেখ হাসিনার বিশ্ববিদ্যালয়ে গমনের নিন্দা করে একটি বিবৃতি দেবে। সেটি প্রথম পৃষ্ঠায় ভালোভাবে ছাপতে হবে। বলা প্রয়োজন, তখন ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জিয়াউদ্দিন বাবলু, পরে তিনি এরশাদের দলে যোগ দিয়েছিলেন।
১৯৮২ সালের ৩০ মে নির্দেশ দেওয়া হয়, জিয়ার মাজারে কোনো রাজনৈতিক নেতার ছবি তোলা যাবে না। একই বছরের ৮ জুন বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির বিবৃতির কিছুই ছাপা যাবে না। আবার ২ সেপ্টেম্বর জানানো হয়, সাংবাদিকদের ব্যাজ ধারণ, দাবি, প্রতিবাদ জ্ঞাপন ও ধর্মঘট বা কর্মবিরতি-সংক্রান্ত কোনো খবর ছাপা যাবে না।
২৬ এপ্রিলের নির্দেশ ছিল কারফিউ লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিদের কোনো খবর ছাপা যাবে না। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বলা হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবস পালন সম্পর্কে ৯টি ছাত্র সংগঠনের বিবৃতি যাবে না। আবার ১৬ সেপ্টেম্বর বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টারিংয়ের দায়ে ছাত্রদের গ্রেপ্তার সম্পর্কে পুলিশ খবর দিলে যাবে, অন্যথায় যাবে না।
১৯৮২ সালের ১৭ অক্টোবর নির্দেশ দেয় যে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কিছু আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এ সম্পর্কে কোনো খবর যাবে না। ৩ নভেম্বর বলা হয়, ৩ নভেম্বর উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে কিংবা বনানী গোরস্থানের সামনে পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি ও গ্রেপ্তারের খবর যাবে না।
১৯৮২ সালেরই ৮ নভেম্বর নির্দেশ দেওয়া হয় যে (ক) বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের ঘটনাবলির কিছুই যাবে না, (খ) একটি সরকারি ভাষ্য দেওয়া হবে, সেটি ছাপতে হবে। ২১ নভেম্বর বলা হয়, ছাত্রদের সাংবাদিক সম্মেলন-সংক্রান্ত কোনো কিছু ছাপা যাবে না। ২৪ নভেম্বরের নির্দেশ ছিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) ‘প্রতীকী কলম বিরতি’ পালনের কোনো খবর যাবে না।
১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সভা, মিছিল ইত্যাদি খবর যাবে না। ৩ জানুয়ারির নির্দেশ ছিল রাজশাহী জেলে কয়েদিদের অনশন সম্পর্কে কোনো খবর যাবে না। ২১ জানুয়ারি বলা হয়, জেনারেল এরশাদের ১৪ জানুয়ারির বক্তব্যের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেওয়া বিবৃতি যাবে না। একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারির নির্দেশ ছিল, একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে কোনো মহলেরই বিবৃতিতে রাজনৈতিক বক্তব্য, সামরিক আইন তুলে নেওয়া, গণতন্ত্র প্রদানের দাবি ইত্যাদি বক্তব্য যাবে না।
১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র মিছিলে গুলিবর্ষণে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত হন। সেই দিনের ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ জানায়, ছাত্রদের মিছিলে পুলিশের গুলি, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি পটভূমিতে আজ ঢাকা শহরে যা ঘটেছে, তার কোনো খবর, ছবি ছাপা যাবে না। পরের দিন বলা হয়, আজকের ঘটনাবলির প্রেসনোটসহ কিছুই যাবে না (সরকারই প্রেসনোট দিয়েছিল। কিন্তু পরে সেই প্রেসনোটও ছাপতে দেয়নি)।
আবার ৪ মার্চ বলা হয়, শেখ হাসিনার বিবৃতিসহ কোনো রাজনৈতিক বিবৃতি যাবে না। ১৬ মের নির্দেশ ছিল ১৪টি ছাত্রসংগঠন, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বা ডাকসুর কোনো খবরই যাবে না। ১৯ মে বলা হয়, খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখানোর খবর ছাপা যাবে না। ৭ জুনের নির্দেশ ছিল, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ধর্মঘট পালনের খবর যাবে না। ১৫ জুন বলা হয়, বিচার দিবস পালন সম্পর্কে কিছুই যাবে না।
৩০ অক্টোবরের নির্দেশ ছিল ১ নভেম্বরের কর্মসূচির সপক্ষে কিছুই যাবে না, তবে এ কর্মসূচির নিন্দা করে ৫০০ আইনজীবীর একটি বিবৃতি আসবে, তা ভালোভাবে ছাপতে হবে। ২৮ নভেম্বর বলা হয়, ১৫ দল, ৭ দল, ১০ দল বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ছাপা যাবে না। ২১ ডিসেম্বরের নির্দেশ ছিল রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ; তাই কোনো রাজনৈতিক খবর ছাপা যাবে না।
এ ধরনের ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ সামরিক শাসন তুলে নেওয়ার পরও জারি ছিল। যেমন, ১৯৮৪ সালের ২ অক্টোবর বলা হয়, গতকাল গলফ ক্লাব এলাকায় যে ডাকাতি হয়েছে, তার খবর যাবে না। ৭ অক্টোবরের নির্দেশ ছিল, ময়েজউদ্দিন হত্যার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরশাদ জড়িত বলে ড. কামাল হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোনোভাবেই ছাপা যাবে না। ৯ অক্টোবর বলা হয়, হোটেল সোনারগাঁওয়ে টেলিকমিউনিকেশন সম্পর্কে সেমিনার হচ্ছে। তাতে আর্মির কোনো নাম এলে ছাপা যাবে না। ১১ অক্টোবরের নির্দেশ ছিল, অলি আহাদের মামলার শুনানি সম্পর্কে কিছু যাবে না।
রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নিয়েও নানা ধরনের অ্যাডভাইস আসত তখন। যেমন, ১৯৮৪ সালের ১৪ অক্টোবরের নির্দেশ ছিল, ঢাকায় ১৫ দল, ৭ দল ও জামায়াতের গণসমাবেশের কোনো খবর যাবে না। সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে ১৫ দলের প্রস্তাব যাবে না, চিফ অব স্টাফ সম্পর্কে খালেদা জিয়ার বক্তব্য যাবে না। বিচারপতি সাত্তার ও মির্জা গোলাম হাফিজের বক্তব্যের কিছুই যাবে না। খবরে কোনো আবেগ বা উচ্ছ্বাস দেওয়া যাবে না।
২০ ডিসেম্বর বলা হয়, ২২-২৩ ডিসেম্বর ৪৮ ঘণ্টা হরতাল সম্পর্কে কোনো খবর যাবে না। ২১ ডিসেম্বরের নির্দেশ ছিল, রাজনীতি বন্ধ: রাজনৈতিক কোনো খবর যাবে না। আবার ১৯৮৫ সালের ১ মার্চের নির্দেশ ছিল, রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও তাঁর কোনো অংশের সমালোচনা করা যাবে না, আস্থা ভোটের সমালোচনা যাবে না, সামরিক আইন, আদেশ ও সামরিক আদালতের সমালোচনা যাবে না। ধর্মঘট মিছিল, সভা-সমাবেশের খবর যাবে না।
১৫ এপ্রিল বলা হয়, পয়লা বৈশাখে রমনা বটমূলের অনুষ্ঠানে মঞ্চ দখলের খবর যাবে না। ১১ মে জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসমাবেশে পুলিশের গুলিতে ছয়জনের মৃত্যুর খবর যাবে না। ২৯ মে বলা হয়, লাশের ছবি ছাপা যাবে না। ৮ জুন বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর পদবি ছাপা যাবে না, শুধু নাম ছাপা যাবে। ১৬ আগস্ট বলা হয়, ডিফেন্স সার্ভিসের কোনো সদস্য চোরাচালানের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছে, এমন খবর যাবে না। জাতীয় ফ্রন্ট ঘোষণার খবর যাবে। তবে কোনো ব্যক্তি, সংবাদ সম্মেলন বা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা যাবে না।
৯ সেপ্টেম্বর বলা হয়, বনানী এমপি পোস্টের কাছে এমপি ও জনতার মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে, এ খবর যাবে না। ২২ সেপ্টেম্বরে নির্দেশ ছিল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস) পরিবেশিত পাটের খবর বড় করে ছাপতে হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর বলা হয়, শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলনের এক লাইনও যাবে না। ২৫ সেপ্টেম্বরের নির্দেশ ছিল, প্রেসিডেন্টের চট্টগ্রামে ভাষণ; ‘আমার জনদল’ এই কথা যাবে না।
২১ অক্টোবর বলা হয়, আজ প্রেসিডেন্ট এরশাদ টিএসসির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিক্ষোভ দেখানো হয়। তার একটি লাইনও যাবে না। ২৯ অক্টোবর নির্দেশ আসে যে কাজী জাফরের চিনিসংক্রান্ত এনার খবর বিশেষভাবে ‘হাইলাইট’ করতে হবে। ১০ নভেম্বরের নির্দেশ ছিল, প্রেসিডেন্টকে হরতাল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। এই বিষয়গুলো যাবে না।
মেরী নামের একজনের সঙ্গে বিয়েসংক্রান্ত খবর নিয়ে তখন ব্যাপক আলোচনা ছিল। ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ ছিল এটা নিয়েও। যেমন, ১৯৮৬ সালের ৪ আগস্ট বলা হয়, লন্ডনের ‘জনমত’ পত্রিকায় বেগম মেরীর বিবাহিত জীবন সম্পর্কে যে খবর ও ছবি ছাপা হয়েছে, তার পুনর্মুদ্রণ কিছুই করা যাবে না। ৮ আগস্ট বলা হয়, লন্ডন ‘অবজারভারে’ এ সম্পর্কে যে খবর ছাপা হয়েছে, তারও পুনর্মুদ্রণ করা যাবে না। একইভাবে ওয়াশিংটনের পত্রপত্রিকায় ও ভারতের পত্রপত্রিকায় মেরী, জিনাত ও অন্যান্যের সম্পর্কে যে খবর বেরিয়েছে, তা পুনর্মুদ্রণ করা যাবে না।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মিছিলে গুলিতে ৯ জন নিহত হয়েছিল। ওই দিনের নির্দেশ ছিল, আজ চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহতদের সংখ্যা পুলিশের প্রেস রিলিজে যা আছে, সেটাই ছাপতে হবে, প্রকৃত সংখ্যা ছাপা যাবে না। ভায়োলেন্সের কোনো ছবি ছাপা যাবে না।
১১ জানুয়ারি বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রামে নিহতদের আত্মীয়স্বজনকে দেখতে যান। তার ছবি ও খবর যাবে না। নিহতদের সম্পর্কে হৃদয়স্পর্শী কোনো বর্ণনাও যাবে না। ৪ ফেব্রুয়ারির নির্দেশ ছিল আজকের সংবাদে কামরুল হাসানের যে স্কেচ ছাপা হয়েছে, তার পুনর্মুদ্রণ করা যাবে না। ১১ ফেব্রুয়ারি বলা হয়, ইউপি নির্বাচনে হাঙ্গামায় নিহতদের সংখ্যা সরকারি সংখ্যার চেয়ে বেশি দেওয়া যাবে না।
১৯৮৮ সালের ২০ জুনের ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাসনা মওদুদকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার ছবি ছাপা যাবে না। তবে ছাত্রদের উচ্ছৃঙ্খলতার বর্ণনা সরকারি প্রেসনোট থেকে ছাপতে হবে। এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ভিসিকে টেলিফোনে যে কড়া কথা বলেছেন, তা ছাপা যাবে না। ১ সেপ্টেম্বর বলা হয়, প্রেসিডেন্ট আজ ডিঅ্যান্ডডি বাঁধ পরিদর্শনে গেলে যেসব অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, তা ছাপা যাবে না। ১১ সেপ্টেম্বরের নির্দেশ ছিল রিগ্যান-এরশাদ বৈঠকের সময় হোয়াইট হাউসের সামনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তা ছাপা যাবে না। ২৫ সেপ্টেম্বর বলা হয়, মীর শওকত আলী সম্পর্কে কোনো খবর যাবে না।
১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ বলা হয়, লন্ডনে প্রকাশিত ‘সৈনিক কথা’ বই থেকে যেকোনো উদ্ধৃতির প্রচার প্রকাশ নিষিদ্ধ। ৩ ফেব্রুয়ারির নির্দেশ ছিল এরশাদের ওয়াশিংটন সফর সম্পর্কে বিবিসির রেডিও মনিটরিং করা যাবে না। ৯ আগস্ট বলা হয়, রাজশাহীতে স্বাস্থ্যনীতির পক্ষে মিছিলের খবর ভালো করে ছাপতে হবে।
গণ-আন্দোলনের সেই এরশাদের পতন হয়েছে। ফলে এখন আর ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ আসে না। কিন্তু তাতে সংবাদপত্র স্বাধীন এটা বলা যাবে না। নানা আইনকানুন করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার চেষ্টা খুব ভালোভাবেই আছে। ‘প্রেস অ্যাডভাইস’ নেই, তবে খবর ছাপা বা না ছাপা বিষয়টি এখনো আছে, অন্য ভাবে, ভিন্ন পন্থায়। সূত্র: প্রথম আলো
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।