পদ্মগুলঞ্চ লতা, আয়ুর্বেদিক অমরত্বের শিকড় !

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ১৪:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

প্রচলিত নামঃ গুলঞ্চ, গুভুচী, পদ্মগুলঞ্চ ইউনানী নামঃ গেলূ আয়ুর্বেদিক নামঃ গুডুচা, গুলঞ্চ। 

গুলঞ্চ লতা আম, জাম, নিম গাছের ওপরে বেয়ে ওঠা লতানো গাছ। কাণ্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটলযুক্ত। বিস্কুট রং এর চামড়া। পাতা পানপাতার মত হৃদয় আকৃতির এবং লম্বা বোটা যুক্ত। লম্বা সুতার মত অসংখ্য বায়ুবীয় মূল যা ঝুলন্ত কাণ্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গাছে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে। পূংকেশর এবং স্ত্রীকেশর ভিন্ন ফুলে থাকে। শ্রীলংকা, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে পাওয়া যায়। শীতকালে পাতা ঝরে যায়, বসন্তে নতুন পাতার সমাগম হয়।

পরিচিতিঃ এটি একটি দীর্ঘ লতানো উদ্ভিদ। সাধারনতঃ অন্য গাছকে অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে। পরিণত বয়সে লতাগুলো আঙুলের ন্যায় মোটা হয়। লতার গায়ের ছালগুলা কাগজের মত পাতলা। নিচে সবুজ এবং ভিতরে সাদা। স্বাদ তিক্ত ও পিচ্ছিল। পাতা সরল, একান্তর, অনেকটা পান আকৃতির, শীতকালে পাতা পড়ে, বসন্তে আবার নতুন পাতা বের হয়। ছোট হরিদ্রাভ সাদা ফুল ও মটরের মত বীজ হয়। ফল পাকলে লাল বর্ণের দেখায়।

প্রাপ্তিস্থানঃ দক্ষিণাঞ্চল ব্যতীত বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়।

রোপনের সময় ও পদ্ধতিঃ বীজ থেকে বর্ষার শেষে চারা গজায়। চারা লাগিয়ে চাষ করা যায়। আবার ডাল থেকেও নতুন গাছ জন্মানো যায়। মে-জুন মাসে ডালার কাটিং লাগাতে হয়।

রাসায়নিক উপাদানঃ লতায় একটি অ্যালকালয়েড, কিছু গ্লাইকোসাইড, স্টেরল ও বিভিন্ন তিক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিদ্যমান।

ব্যবহার্য অংশঃ পাতা ও লতা।

গুণের কথাঃ সকল প্রকার চর্মরোগ, পুরাতন বা জীর্ণ জ্বর, অরুচি, বাতের যন্ত্রনা, রক্তঅর্শ, ডায়াবেটিস, অগ্নিমান্দ্য, জন্ডিস, সোরিয়াসিস ও কৃমিতে উপকারী।

বিশেষ কার্যকারিতাঃ সকল প্রকার চর্মরোগ।

পটাশিয়াম স্নায়ুবিক শক্তিবৃদ্ধি করে। ক্রমিয়াম শর্করা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। আয়রন হেমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে ও ক্যালশিয়াম স্নায়ু, হৃদযন্ত্র এবং পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে।

এ গাছের রস বেশ তিতা তবে এর মধ্যে আছে এন্টি অকসিডেন্ট, এন্টিহাইপার গ্লাইসেমিক, এন্টি- নিওপ্লাসটিক, এন্টিডোট, এন্টি-প্লাসমোডিক, এন্টি-হাইপারটিক, এন্টি-এলার্জিক, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টিহাইপার লাই পেডেমিয়া, এন্টি-এষ্ট্রেস গুনাবলী।

আরও আছে এলকালয়েড, ডিটারপিনয়ড, ল্যাকটোনস, ষ্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ ও পলিসাকারাইড।

আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে জন্ডিস, ডায়াবেটিস, আর্থ-রাইটিস, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, আমাশয়, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ, রক্তশূন্যতা, ব্রনকাইটিস, এজমা, পাইল্স, কিডনি রোগ, ও সাপের বিষের এন্টিডোট হিসেবে ব্যবহার হয়।

রোগ অনুযায়ী ব্যবহার পদ্ধতিঃ
রোগেরনামঃ সকল প্রকার চর্মরোগ
ব্যবহার্য অংশঃ কাণ্ড (কাঁচা)
মাত্রাঃ ৮-১০ গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ থেতো করে ১ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে কচলিয়ে ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু সেব্য, প্রত্যহ ২-৩ বার।

রোগেরনামঃ পুরাতন বা জীর্ণ জ্বরে
ব্যবহার্য অংশঃ পাতা/কাণ্ড (কাঁচা)
মাত্রাঃ ১০-২০ গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতিঃ থেতো করে ১ কাপ গরম পানিতে ৩/৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে কচলিয়ে ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু সেব্য, প্রত্যহ ২-৩ বার।

রোগেরনামঃ কৃমি বিনাশে
ব্যবহার্য অংশঃ কাণ্ডের রস
মাত্রাঃ ১০-১৫ মিলি (২-৩ চা চামচ)
ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রত্যহ ২-৩ বার চিনিসহ সেব্য। (৫-৭ দিন)

পুষ্টিকথাঃ
এ লতায় আছে আশঁ প্রোটিন এবং প্রতি ১০০ গ্রামে ২৯২.৫৪ ক্যালরির পুষ্টি শক্তি। এ লতায় আছে নানা রকম রাসায়নিক যোগ যেমন জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিন, ক্যালশিয়াম, টাইটানিয়াম, ক্রমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, ব্রমিন, ষ্ট্রোনশিয়াম এবং পটাশিয়াম।

সেবন কথাঃ
১. সব ধরনের চর্মরোগে ৮ থেকে ১০ গ্রাম কাঁচা কাণ্ড থেঁতো করে ১ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে কচলিয়ে ছেঁকে পানিটুকু দিনে ২ থেকে ৩ বার পান করতে হবে। নিয়মিত এক মাস পান করলে চর্মরোগ সেরে যাবে।

২. কৃমি দূর করতে ২ থেকে ৩ চা চামচ গুলঞ্চের কাণ্ডের রস দিনে ২ থেকে ৩ বার চিনি মিশিয়ে খেলে কৃমি থাকবে না। কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন পান করতে হবে।

৩. শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে গুলঞ্চের কাঁচা পাতার রস উপকারী।

৪. বহুদিনের বাতজ্বর বা থেমে থেমে জ্বরের চিকিৎসায় গুলঞ্চের কাণ্ড ব্যবহার হয়।

৫. জন্ডিস, হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, বহুমূত্র গুলঞ্চের কাঁচা পাতা ও কাণ্ড দুটোই ব্যবহার হয়।

৬. চর্মরোগ, শ্বাসনালির অনিয়ম রোগে ব্যবহৃত হয়।

৭. বোধশক্তি উন্নত করতে গুলঞ্চের কাঁচা পাতা রস ব্যবহার হয়।

৮ .কাঁচা কাণ্ডের রস মূত্র বৃদ্ধিকারক।

পান করার পরিমাণঃ
পাতার রস ২ থেকে ৩ চামচ এবং কাঁচা পাতা বা কাণ্ড ৮ থেকে ১২ গ্রাম পান করতে হবে। তাজা গুলঞ্চ ব্যবহার করা ভালো।

জ্বর হলে পাতা ভাজি করে খাওয়ানো হয়। লতা ছেঁচে রস করে খাওয়ানো হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি পান করা উচিত ময়।

গুলঞ্চলতা কেবল আমাদের এ উপমহাদেশ না, পৃথিবীর মানবের জন্যে রোগ নিরাময়ে এক আশীর্বাদ স্বরূপ। 

গুলঞ্চ লতার ঔষধি গুণাগুণঃ

ঘোড়া গুলঞ্চ ও পদ্ম গুলঞ্চ নামে দুটি লতা ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যায়। গুলঞ্চ লতা বা গুড়ুচ হচ্ছে মেনিস্পারমাসি পরিবারের টিনোস্পোরা গণের একটি লতানো উদ্ভিদ। এই গাছের রয়েছে অনেক রকমের ভেষজ গুণ। এদের ভেতরে পদ্ম গুলঞ্চের গুণাগুণ বেশি। নিচে এই লতার গুণসমূহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

ব্যবহারঃ

১. পুরাতন বা জীর্ণ জ্বরেঃ গুলঞ্চের পাতা শাকের মতো কুচিয়ে ভেঙ্গে খেলে জ্বর ছেড়ে যায়। পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে ৮ থেকে ১০ গ্রামের মতো গুলঞ্চের ডাঁটা অল্প জল দিয়ে থেতো করে নিংড়ে ওই রসকে ছেঁকে, অল্প গরম করে খেতে হবে, এটাতেও কাজ হবে অথবা থেতো করা ওই গুলঞ্চ এক কাপ জলে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে অল্প চিনি মিশিয়ে খেতে হবে অথবা গুলঞ্চের রস বা ক্বাথ দিয়ে ঘি তৈরী করে খেতে হবে। এতে জ্বর ছেড়ে যায়।

২. অরুচিতেঃ যাঁদের মুখে কিছু ভাল লাগে না, খেতে ইচ্ছে হয় না, তাঁরাও এই পাতা ভেজে খেয়ে দেখুন, তাহলে অরুচি চলে যাবে।

৩. বাতের যন্ত্রণায়ঃ প্রায়ই হাত পা কনকন করে, এই ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম অন্দাজ গুলঞ্চ ছেঁচে উপরিউক্ত নিয়মে ক্বাথ করে অল্প একটু দুধ মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে ওটা উপশম হবে। তবে যে সব কারণে যেমন আহার, বিহারের জন্য বাত বাড়ে সেগুলিকে বর্জন তো করতেই হবে।

৪. পচা ঘায়েঃ ১০ থেকে ১৫ গ্রাম থেঁতো গুলঞ্চের ক্বাথ করে সেটা দিয়ে ক্ষত ধুলে পচা ঘায়ের ব্যথা কমে যাবে।

৫. হৃৎ কম্পনেঃ ৫ থেকে ৭ গ্রাম গুলঞ্চকে ক্বাথ করে খেলে ওটা কমে যাবে, তবে ২ গ্রেণ বা একরতি গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেতে হবে।

৬. রক্তার্শেঃ যাঁরা এ রোগে ভুগছেন, তাঁরা ৫ থেকে ৭ গ্রাম গুলঞ্চকে ক্বাথ করে খেতে হবে তাহলে প্রশমিত হবে। তবে এই ক্বাথকে ভাগ করে দুই বেলায় খেতে হবে।

৭. দ্বিতীয় যোগ (অর্শের) একটা মাটির বাটি বা খুরিতে গুলঞ্চের রস মাখিয়ে, সেই পাত্রে দই পেতে সেই দই খেলে অর্শের উপকার হয়।

৮. আগ্নিমান্দ্যেঃ খাওয়ার ইচ্ছে যেমন কম, আবার খেলেও হজম হতে চায় না, যাকে বলা হয় অগ্মিমান্দা রোগ বা শ্লেষ্মাপ্রধান অগ্নিমান্দা, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চ শুকিয়ে গুড়া করে প্রত্যহ ১ গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ক্ষিধে বেড়ে যাবে।

৯. স্বরভঙ্গেঃ স্থুলকায়, তার সঙ্গে আবার কফের যোগ হলে অনেকের স্বরভঙ্গ হয়, সেখানে গুলঞ্চের ক্বাথে কাজ হয়।

১০. কাসিতেঃ অনেক সময় কাসি হেকে ডেকে আসে না, খসখসে, সেখানে একটু গুলঞ্চের ক্বাথে মধু মিশিয়ে খেলে অসুবিধাটা কমে যাবে।

১১.বাতরক্তেঃ অনেক সময় গায়ে চাকা চাকা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে শক্ত হয়, আবার ব্যথাও থাকে; এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের রস বা ক্বাথ দিয়ে তৈরী তেল মাখা, অভাবে গুলঞ্চের রস গায়ে মাখা ও গুলঞ্চের ক্বাথ খাওয়া, এর দ্বারা ঐ বাতরক্তজনিত অসুবিধা যেটা আসছে সেটা দূর হবে। তবে এটি যদি পদ্মগুলঞ্চ হওয়া দরকার, তা না হলে আশানুরূপ উপকার হয় না।

১২. কমলা বা ন্যাবা রোগঃ ২ ইঞ্চি পরিমাণ গুলঞ্চ চাকা চাকা করে কেটে ১ কাপ জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জলটায় একটু চিনি মিশিয়ে খেতে হবে।

১৩. বাতজ্বরেঃ সর্দি কাসি কিছুই নেই, হঠাৎ হাই উঠে কেঁপে জ্বর আসে, আবার খানিকক্ষণ বাদে কমে যায়, একে বলে বাতিকের জ্বর, এ ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ গ্রাম গুলঞ্চকে থেঁতো করে তার ক্বাথ ছেঁকে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে খেতে হবে।

১৪. শুল ব্যথাঃ গুলঞ্চ চূর্ণ ১ গ্রাম, গোল মরিচের গুঁড় সিকি গ্রাম একসঙ্গে গরম পানি দিয়ে খেতে হবে।

১৫.বসন্ত রোগেঃ হাত পা অসম্ভব ব্যাথা করে এক্ষেত্রে গুলঞ্চ রস করে অল্প জল দিয়ে থেঁতো করলেই এর রস সহজে বেরোয়; সেই রস হাত পায়ে লাগালেই ঐ জ্বালা কমে যাবে।

১৬. পেটের দোষেঃ প্রায়ই ভুগে থাকেন, পেট জ্বালাও করে, সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাকাসে ভাব আসছে, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের ক্বাথ কাজে আসে।

১৭. সোরিয়াসিসে (Psoriasis)ঃ গায়ে চাকা চাকা হয়ে ওঠে, মুমড়ি পড়তে থাকে, আবার কোনো কোনো জায়গা থেকে রস গড়তে থাকে, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের ক্বাথ খাওয়া, গুলঞ্চের রস দিয়ে তৈরী তেল মাখা, আর গুলঞ্চ রস করে গায়ে মাখা। অদ্ভুত ফল পাবেন।

১৮. পিত্ত বমিতেঃ পেটে কিছু থাকছে না, সে ক্ষেত্রে আধ কাপ জলে দেড় বা দুই ইঞ্চির মতো গুলঞ্চ পাতলা চাকা চাকা করে কেটে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, তারপর তা থেকে ছেঁকে ২ থেকে ১ চামচ করে জল নিয়ে তার সঙ্গে ২ থেকে ১ চামচ দুধ মিশিয়ে খেতে হয়। অবশ্য এটা পিত্তশ্লেষ্মা জন্য বমনেই ভাল।

১৯. পিপাসায়ঃ ঐভাবে কাটা গুলঞ্চ ও মৌরী একসঙ্গে ভিজিয়ে ঐ জল একটু একটু করে খেতে হবে তাহলে পিপাসা চলে যায়।

২০. মেদবৃদ্ধিতেঃ যারা না খেয়েই মোটা আর খেলে তো কথায় নেই, তাঁরা ৮ থেকে ১০ গ্রাম গুলঞ্চের ক্বাথ করে বা ১ কাপ আন্দাজ; তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে হবে, তবে ২ থেকে ৪ দিন খেয়েই হতাশ হলে চলবে না।

২১. ক্রিমিতেঃ গুলঞ্চের ক্বাথ একটু একটু খেতে হবে, বা খেলে ক্রিমি সমস্যার সমাধান হবে।

গুলঞ্চের চিনি বা শ্বেতসার প্রস্তুতঃ

পরিণত বয়সের মোটা মোটা গুলঞ্চকে টুকরো টুকরো করে কেটে থেঁতো করে ৮ গুণ জল দিয়ে ভাল করে মসটে, যাকে বলা হয় চটকে নিয়ে, একটু চুবড়িতে ঢেলে দিলে সিটেগুলি মোটামুটি ভাবে বেরিয়ে যাবে, তারপর ওই জল থিতিয়ে গেলে উপরের ওই জল আস্তে আস্তে ঢেলে ফেলতে হবে। নিচে যেটা থিতিয়ে বসে আছে সেইটাই রোদে শুকিয়ে ছেকে নিলেই গুলঞ্চের শ্বেতসার পাওয়া যায়; একেই গুলঞ্চের চিনি বলে। বহু রোগের ক্ষেত্রে এই চিনি ব্যবহার করা হয়।

২২. মস্তিকের দূর্বলতাঃ গুলঞ্চের চিনি ৩ রতি থেকে এক আনা মাত্রায় একটু দুধের সঙ্গে খেলে ঐ দূর্বলতাটা কেটে যায়।

২২. দূর্বলতাঃ দীর্ঘদিন থেকে চলছে, অস্থির কোনো পোষণ নেই; সেক্ষেত্রে অল্প ঘিয়ের সঙ্গে গুলঞ্চর চিনি ১ গ্রাম আন্দাজ মিশিয়ে চেটে খেলে আস্তে আস্তে সমস্যার ঠিক হয়ে যাবে।

২৩. প্রমেহ রোগেঃ প্রমেহ কথাটার দ্বারা প্রস্রাব ঘটিত বহু, রোগের ইঙ্গিত বহন করে, তার মধ্যে যে মেহে প্রস্রাবের পূর্বে বা পরে লালার মত নির্গত হয় তাকে বলা হয় লালা মেহ। এই ক্ষেত্রে গুলণ্ডের চিনি হাফ গ্রাম এবং তার সঙ্গে কাবাবচিনি হাফ গ্রাম মাত্রায় একত্রে দুধসহ খেলে কয়েক দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়।

আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত যে, নিম গাছের গুলঞ্চই বেশী তিক্ত হয়, এবং সেই গাছের গুণ গ্রহণ করে। এরা অপরাশ্রীতা লতা হলেও অপরের রস গ্রহণ করার উপযোগী পরিবেশই বা কোথায়? তারা তো মাটি থেকে রস গ্রহণ করে। তবে প্রজাতি ভেদে সে যে গাছই আশ্রয় করে থাকুক না কেন, স্বল্প বা তিক্ত হবেই।

সাধারণ গুলঞ্চ যাকে আমরা চলতি কথায় বলি ‘ঘোড়া গুলঞ্চ’ (Tinospora cordifolia)। সে গুলঞ্চ নিমগাছের হলে সে তিক্ত হবে। আবার পদ্মগুলঞ্চ যদি আমড়া গাছেও হয়, তার তিক্ততা যে কেমন তা যে পান করে সেই বুঝবেন।

২৪.মাথায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি ও ব্যথাও আছে, আবার মুখে মামড়িও পড়ে; এটি পিত্তশ্লেষ্মাজ ব্যাধি। এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের রস দিয়ে তৈরী তেল মাথায় লাগালে ভাল কাজ হয়, তা না হলে ১ চামচ রস ৩ থেকে ৪ চামচ জল মিশিয়ে একটু গরম করে সেইটা প্রত্যহ একবার করে কয়েকদিন লাগানো আর গুলঞ্চের রস খেতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ গুলঞ্চ লতা থেকে অ্যালিলো রসায়ন পাওয়া যায়। এই ধরণের আলিলো রসায়ন ইউক্যালিপ্টাস গাছের শেকড় এবং পাতা থেকেও নিঃসৃত হয় যা অন্য গাছের অঙ্কুরোদ্গম বা বৃদ্ধির অন্তরায় ঘটিয়ে থাকে। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা এখন ভেবে দেখছেন এই প্রাকৃতিক রসায়ন ইনসেক্‌টিসাইড হিসেবে ব্যবহার করা যায় কি না।

সতর্কীকরণ: ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোনো ভেষজ ওষুধ নিজ দায়িত্বে ব্যবহার করুন।

তথ্যসূত্রঃ ১. আয়ূর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্রচার্য, চিরঞ্জীব বনৌষধি‘ খন্ড ১, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৭১।

গুলঞ্চ লতা আয়ুর্বেদিক মতে অমরত্বের শিকড়। গুলঞ্চ লতা ও পাতার রস বেশ তিতা। গুলঞ্চ একটি দীর্ঘ লতানো উদ্ভিদ। সাধারণতঃ অন্য গাছকে (আম, জাম, নিমসহ বিভিন্ন গাছ) অবলম্বন করে বেড়ে ওঠে।কাণ্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটল যুক্ত। বিস্কুট রং এর চামড়া। পরিনত বয়সে লতাগুলো আঙুলের ন্যায় মোটা হয়। লতার গায়ের ছালগুলা কাগজের মত পাতলা। নিচে সবুজ এবং ভিতরে সাদা। স্বাদ তিক্ত ও পিচ্ছিল।

লম্বা সুতার মত অসংখ্য বায়ুবীয় মূল যা ঝুলন্ত কাণ্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। পাতা সরল, একান্তর, অনেকটা পান পাতার মত হৃদয় আকৃতির এবং লম্বা বোটা যুক্ত। ছোট হরিদ্রাভ সাদা ফুল ও মটরের মত বীজ হয়। পুংকেশর এবং স্ত্রীকেশর ভিন্ন ফুলে থাকে। ফল পাকলে লাল বর্ণের দেখায়।

গুলঞ্চের ফুল গ্রীষ্মকালে ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে। শীতকালে পাতা ঝরে যায় আবার বসন্তে নতুন পাতার সমাগম হয়। বীজ থেকে বর্ষার শেষে চারা গজায়। চারা লাগিয়ে চাষ করা যায়। আবার ডাল থেকেও নতুন গাছ জন্মানো যায়। মে-জুন মাসে ডালের কাটিং লাগাতে হয়। শ্রীলংকা, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে গুলঞ্চ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবনাক্ত এলাকা ব্যতীত প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়।

রোগ অনুযায়ী ব্যবহার পদ্ধতিঃ

১. সব ধরনের চর্মরোগে ৮ থেকে ১০ গ্রাম কাঁচা কাণ্ড থেঁতো করে ১ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে কচলিয়ে ছেঁকে পানিটুকু দিনে ২ থেকে ৩ বার পান করতে হবে। নিয়মিত এক মাস পান করলে চর্মরোগ সেরে যাবে।

২. কৃমি দূর করতে ২ থেকে ৩ চা চামচ গুলঞ্চের কাণ্ডের রস দিনে ২ থেকে ৩ বার গুড় মিশিয়ে খেলে কৃমি থাকবে না। কমপক্ষে ৫ থেকে ৭ দিন পান করতে হবে।

৩. শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে গুলঞ্চের কাঁচা পাতার রস উপকারী।

৪. বহুদিনের বাতজ্বর বা থেমে থেমে জ্বরের চিকিৎসায় গুলঞ্চের কাণ্ড ব্যবহার হয়।

৫. জন্ডিস, হাত-পায়ে জ্বালাপোড়া, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুলঞ্চের কাঁচা পাতা ও কাণ্ড দুটোই ব্যবহার হয়।

৬. চর্মরোগ, শ্বাসনালির অনিয়ম রোগে ব্যবহৃত হয়।

৭. বোধশক্তি উন্নত করতে গুলঞ্চের কাঁচা পাতা রস ব্যবহার হয়।

৮. কাঁচা কাণ্ডের রস মূত্র বৃদ্ধিকারক।

৯. জ্বর হলে পাতা ভাজি করে খাওয়ানো হয়। লতা ছেঁচে রস করে খাওয়ানো হয়।

এসব ক্ষেত্রে পাতার রস ২ থেকে ৩ চামচ এবং কাঁচা পাতা বা কাণ্ড ৮ থেকে ১২ গ্রাম পান করতে হবে। থেতো করে ১ কাপ গরম পানিতে ৩/৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে পরবর্তীতে কচলিয়ে ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু সেব্য, প্রত্যহ ২-৩ বার।

১০. অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে গুলঞ্চের জুড়ি নেই। এক ফুট পরিমাণ গুলঞ্চ লতা টুকরো টুকরো করে দুই কাপ পানিতে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেবন করুন। একই গুলঞ্চ সকালে পুনরায় পানিতে ভিজিয়ে বিকালে সেবন করুন। তাজা গুলঞ্চ লতা ও পাতা ব্যবহার করা উত্তম।

সতর্কতাঃ ঘরে প্রস্তুতকৃত যে কোন ভেষজ ঔষধ নিজ দায়িত্বে সেবন করুন। নির্ধারিত মাত্রার অধিক সেবন করা সমীচীন নয়। গর্ভবতী নারীদের সেবন বর্জনীয়।

গুলঞ্চে আছে এন্টি-অক্সিডেন্ট, এন্টিহাইপার গ্লাইসেমিক, এন্টি- নিওপ্লাসটিক, এন্টিডোট, এন্টি-প্লাসমোডিক, এন্টি-হাইপারটিক, এন্টি-এলার্জিক, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টিহাইপার লাই পেডেমিয়া, এন্টি-এষ্ট্রেস সমৃদ্ধ গুনাবলী।

অন্যান্য স্থানীয় নাম: গুলঞ্চ, পদ্মগুলঞ্চ, কুমার লত, ঘাম লত, আমবুরুচ, গুডুস, গুড্ডুচি, গুভুচী, গুঞ্চা, গুড়ুচি, গুলচি, অমৃত, অমৃতা, অমৃতলতা, অমরুতাবল্লী, অমৃদবল্লী, অমৃতবল্লী, পেয়ামৃতম, যোগানীবল্লী, গিলয়, গিলোয়, গিলে, গালো, গুলবেল, অমৃতবেল, অম্বরবেল, বতসাদনী, চিন্নরুহা, তত্রিকা, মধুপর্ণী, চিন্না, সিন্দিলকোরি, তিপ্পতিগে, গরহম, পালো, চিত্তামুতু, আম ঘোরস, আম্বুরুশ।

তথ্যসূত্র: ১. চিরঞ্জীব বনৌষধি - আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য, ২. ভারতীয় বনৌষধি - ড.কালিদাস বিশ্বাস, ৩. বাংলাদেশ আগাছা পরিচিতি- বাংলা একাডেমী, ঢাকা, উইকিপিডিয়া

 

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুলঞ্চ (গিলয়)
টিনোস্পোরা উদ্ভিদের পাতা (Tinospora cordifolia)

গুলঞ্চ (গিলয়) বা টিনোস্পোরা (সংস্কৃত নাম: অমৃত, তন্ত্রিকা, কুণ্ডলিনী, চক্রলক্ষ্মীণি) হচ্ছে একটি মেনিসপার্মেসিয়া পরিবারের অর্ন্তভূক্ত পর্ণমোচী উদ্ভিদ যা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বহুলভাবে জন্মায়। যার বৈজ্ঞানিক নাম: টিনোস্পোরা কর্ডিফোলিয়া। এর সাধারণ নাম: গিলয়, গুডুস, গুড়ুচি, গুলবেল, হার্ট-লিভড মুনসিড (heart leaf moonseed), টিনোস্পোরা।

প্রশমণের গুণ এবং স্বাস্থ্যকর উপাদানের জন্য আয়ুর্বেদিক এবং ঘরোয়া চিকিৎসায় এটির কদর অসামান্য। বস্তুত, স্বাস্থ্যের সার্বিক উপকারিতার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার জন্য আয়ুর্বেদে এটিকে ‘‘রসায়ন’’ নামে অভিহিত করা হয়। সংস্কৃতে এটিকে ‘‘অমৃত’’ বলা হয়েছে, যার অর্থ ‘‘অমরত্বসুধা’’।

এই উদ্ভিদের অসাধারণ গুণের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, পুরাণে ‘‘দেবতারা’’ যা পান করে চিরকালীন যৌবন এবং স্বাস্থ্যের অধিকারী হতেন বলে বর্ণিত আছে, তা হয়তো ছিল এই গুলঞ্চ বা গিলয়। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যবাহী ওষুধের শতাব্দী ব্যবহারের সত্ত্বেও, কোনও উচ্চমানের ক্লিনিকাল প্রমাণ নেই যে এটিতে রোগের উপর কোনও প্রভাব আছে।

উদ্ভিদসংক্রান্ত বর্ণনাঃ
গুল্মটি অন্য গাছের ওপরে বেয়ে ওঠা লতানো উদ্ভিদ। কাণ্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটল যুক্ত। বিস্কুট রং এর চামড়া। পাতা পানপাতার মত হৃদয় আকৃতির এবং লম্বা বোটা যুক্ত। লম্বা সুতার মত অসংখ্য বায়ুবীয় মূল যা ঝুলন্ত কাণ্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গাছে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে। পূংকেশর এবং স্ত্রীকেশর ভিন্ন ফুলে থাকে। এর কাণ্ড দুর্বল এবং রসালো। কাণ্ডের রং হচ্ছে সাদা থেকে ধূসর এবং তা ১-৫ সেমি পর্যন্ত মোটা হতে পারে।

গুলঞ্চের পাতা দেখতে হৃদয়ের (হার্ট) আকারের এবং তাতে মেমব্রেন (ঝিল্লি) আছে। তাতে গ্রীষ্মকালে সবজেটে-হলুদ রঙের ফুল ফোটে আর গুলঞ্চের ফল সাধারণত শীতকালে দেখা যায়। গুলঞ্চের সবুজ রঙের আঁটিযুক্ত ফল (ড্রুপ) হয়ে থাকে যা পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। গুলঞ্চের কাণ্ডেই অধিকাংশ নিরাময়যোগ্য গুণ আছে, তবে পাতা, ফল, এবং শিকড় বা মূলেও অল্পবিস্তর গুণ আছে।

উৎপত্তিঃ
আদিতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাওয়া যেত গুলঞ্চ লতা। শ্রীলঙ্কা, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্যও দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু এখন চিনেও এ উদ্ভিদ পাওয়া যায়।

ব্যবহারঃ
ব্যবহৃত অংশ: কাণ্ড, পাতা।
এ লতায় আছে আশঁ (১৫ - ১৯%), প্রোটিন (৩.১%) এবং প্রতি ১০০ গ্রামে ২৯২.৫৪ ক্যালরি পুষ্টি শক্তি। এ লতায় আরো আছে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ যেমন জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিন, ক্যালশিয়াম, টাইটানিয়াম, ক্রমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, ব্রমিন, ষ্ট্রোনশিয়াম এবং পটাশিয়াম।

জানামতে পটাশিয়াম (০.৮৪৫%) যা স্নায়ুবিক শক্তিবৃদ্ধি করে। ক্রমিয়াম (০.০০৬%) শর্করা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। আয়রন (০.২৮%) যা হেমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে এবং ক্যালশিয়াম (০.১৩%) স্নায়ু, হৃদযন্ত্র এবং পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে। এ গাছের রস বেশ তিতা তবে এর মধ্যে আছে এন্টি-অকসিডেন্ট, এন্টিহাইপার গ্লাইসেমিক, এন্টি- নিওপ্লাসটিক, এন্টিডোট, এন্টি-প্লাসমোডিক, এন্টি-হাইপারটিক, এন্টি-এলার্জিক, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টিহাইপার লাই পেডেমিয়া, এন্টি-এষ্ট্রেস সমৃদ্ধ গুনাবলী।

এর মধ্যে আরো আছে এলকালয়েড, ডিটারপিনয়ড, ল্যাকটোনস, ষ্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ এবং পলিসাকারাইড। যুগযুগ ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে জন্ডিস, ডায়াবেটিস, আর্থ-রাইটিস, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, আমাশয়, গনোরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ, রক্তশূন্যতা, ব্রনকাইটিস, এজমা, পাইল্স, কিডনি রোগ, এবং সাপের বিষের এন্টিডোট হিশাবে ব্যবহার হয়।

গুলঞ্চের স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে গুলঞ্চ একটি পরিচিত গুল্ম। গুলঞ্চের কাণ্ড শুধুমাত্র নিরাময়ের একটি চমৎকার এজেন্ট নয়, কিন্তু রাসায়নিকভাবে এটি আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে ঠিকভাবে এবং তাদের সম্পূর্ণ শক্তি-সহ কাজ করে তা নিশ্চিত করে। এই আয়ুর্বেদিক মহৌষধের বহু স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে।

ওজন কমাতে গুলঞ্চঃ
গুলঞ্চ হাইপোলিপিডেমিক হিসাবে কাজ করে বলে নিয়মিত সেবন করলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ দেয়। শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এবং যক্কৃৎ রক্ষা করে।

জ্বর উপশমে গুলঞ্চঃ
দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের চিকিৎসার জন্য চিরাচরিতভাবে গুলঞ্চ ব্যবহার হয়। বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা বুঝতে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে জ্বর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে।

তবে কীভাবে এই গুল্ম কাজ করার জন্য শারীরের তাপমাত্রা কমে তার তেমন কোনও নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি। কাজেই গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে কোনও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের কাছে এ ব্যাপারে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। গুলঞ্চ ইমিউনোমডিউলেটরি প্রক্রিয়া করে এবং তার অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আছে। ডেঙ্গি জ্বরের মতো জীবাণুর সংক্রমণের হাত থেকে এটি রক্ষা করে।

ডায়বেটিসের প্রতিরোধে গুলঞ্চঃ ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয় বলে ডায়বিটিসের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হয়।

শ্বাসকষ্ট রুখতে গুলঞ্চঃ দেখা গিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস-এর চিকিৎসায় গুলঞ্চ কার্যকরী ভূমিকা নেয় এবং হাঁপানি বা অ্যাজমার উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রেও এটি কাজে লাগে।

মহিলাদের জন্য গুলঞ্চঃ রোগ প্রতিরোধী উপাদানগুলির জন্য রজঃনিবৃত্তি উত্তর (পোস্টমেনোপজাল) মহিলাদের জন্য গুলঞ্চ খুব কাজে লাগে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়) রোধ কমাতে পারে। পুরুরষদের জন্য গুলঞ্চঃ গুলঞ্চের ব্যবহারে বীর্যধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বা ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।

ক্যান্সারের প্রতিরোধে গুলঞ্চঃ কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গুলঞ্চের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার করা যেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুলঞ্চঃ দুশ্চিন্তা, অবসাদ এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার হয়।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top