শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পদত্যাগের যে কারণ জানালেন প্রধান বিচারপতি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১১ আগষ্ট ২০২৪, ১৫:৫১

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়লেন ওবায়দুল হাসান। পদত্যাগ করার কারণ জানিয়েছেন তিনি। পদত্যাগপত্রে ওবায়দুল হাসান জানান, কোর্টের বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা রক্ষা এবং বিচারপতিদের শারীরিক হেনস্তা এড়াতেই পদত্যাগ করেছেন।

পদত্যাগপত্রের বর্ণনায় ওবায়দুল হাসান লেখেন, ‘সুপ্রিমকার্ট বিল্ডিং এবং এর রেকর্ডসমূহ রক্ষা, কোর্ট প্রাঙ্গণ রক্ষা, বিচারপতিদের বাড়িঘর, জাজেজ টাওয়ার রক্ষা, বিচারপতিদেরকে শারীরিক হেনস্তা থেকে রক্ষা করা এবং জেলা জজ কোর্টগুলো ও রেকর্ড রুম রক্ষার স্বার্থে আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো।’

এর আগে শনিবার প্রধান বিচারপতির পদ থেকে ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়েছেন।

এর আগে আজ ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ অবিলম্বে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের মদতপুষ্ট ও নানা অপকর্মে জড়িত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সরকারের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনা না করে ফুল কোর্ট মিটিং ডেকেছেন। পরাজিত শক্তির যেকোনো প্রকার ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। আইনজীবীরা ইতোমধ্যেই এর প্রতিবাদে জড়ো হয়েছেন।’

আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আজ শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজ থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ তথ্য জানান।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘পদত্যাগ করেছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর পদত্যাগপত্র আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে। এর উপযুক্ত প্রসেসের জন্য কাল বিলম্ব না করে আমরা এটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। আমি আশা করব কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আপনারা সবাই শান্ত থাকবেন দেশের সম্পদ নষ্ট করবেন না।’

ফুল কোর্ট সভা কী? কেন ডাকা হয়?

সুপ্রিম কোর্টকে বাংলাদেশের সংবিধানের রক্ষক এবং ব্যাখ্যাকারী বলা হয়। বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ স্তর এই সুপ্রিম কোর্ট। আর, প্রধান বিচারপতিই বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশের সর্বোচ্চ এ আদালতে দুইটি বিভাগে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ দুটি বিভাগ হলো আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ।

এই দুই বিভাগের সকল বিচারপতির অংশগ্রহণে যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তাকেই 'ফুল কোর্ট' সভা বলা বলা হয়। বিচার বিভাগের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এই সভা আহ্বানের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির।

এতদিন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিভাগে মোট ৯০ জন বিচারপতি ছিলেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে সাতজন এবং হাইকোর্ট বিভাগে ৮৩ জন বিচারকার্য পরিচালনা করতেন।

'ফুল কোর্ট' বৈঠকে বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সবার সাথে আলোচনা করেন প্রধান বিচারপতি। অনেক সময় জরুরি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও এ সভা আহবান করা হয়ে থাকে।

তবে, শনিবার ডাকা ফুল কোর্ট সভার ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল বলে মনে করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছে তথ্য ছিল যে অন্তর্র্বতী সরকারকে সাংবিধানিকভাবে অবৈধ ঘোষণা করতেই ফুল কোর্ট সভা আহ্বান করা হয়েছিল।

আপিল বিভাগের কার্যক্রম

আপিল বিভাগ বিচার পাওয়ার সবশেষ ধাপ। এখানে যেসব মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয় সেগুলো হাইকোর্ট বিভাগ থেকে নিষ্পত্তি হয়ে আসে। সেসব মামলার আপিল আবেদন শুনানি হয় আপিল বিভাগে। অর্থাৎ হাইকোর্টের দেয়া চূড়ান্ত বিচারিক রায় পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগে পর্যাপ্ত বিচারক থাকা সাপেক্ষে দুইটি বেঞ্চে বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ, আরেকটি আপিল বিভাগের সর্বজ্যেস্ঠ বিচারপতি পরিচালনা করার রেওয়াজ ও প্রথা রয়েছে। প্রধান বিচারপতি আপিল বিভাগের প্রধান বেঞ্চের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন। আপিল বিভাগের বিচারপতিদের একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। বাংলাদেশে বেশিরভাগ সময়ই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার সমর্থক কিনা এ বিষয়টি বিবেচনা করা হয়।

যদিও বরাবরই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীরা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের দাবি জানান। কিন্তু সরকার সমর্থক বিবেচনা করে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে।

প্রধান বিচারপতির সাথে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধান অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ৬৭ বছর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

সবশেষ গত ২৫ শে এপ্রিল আপিল বিভাগে তিনজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় আটজন বিচারপতি হলেও একজন রিটায়ার করায় সাতজন বিচারপতি পরের দিনগুলোতে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম

হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত আছেন ৮১ জন স্থায়ী বিচারপতি এবং দুইজন অস্থায়ী বিচারপতি।সবশেষ ২০২২ সালের ৩১ শে জুলাই হাইকোর্ট বিভাগে ১১ জনকে অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

পরে এ বছরের ৩০ শে জুলাই নয়জনকে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী করা হয়। ওইদিন বিকেলে তাদের শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি।

এদিনই হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে সকাল থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে আর গুলি না চালায় এমন নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি চলছিল।উল্লেখ্য, এই বেঞ্চের একজন বিচারকসহ এগারজনের মধ্যে দুইজনকে স্থায়ী না করে আরো ছয়মাসের জন্য হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

হাইকোর্ট বিভাগে বেঞ্চ গঠন করার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। এ বিভাগের একক ও দ্বৈত বেঞ্চ ফৌজদারি, দেওয়ানী, কোম্পানি এবং বিভিন্ন ধরনের আবেদনের শুনানি করে থাকে।

হাইকোর্ট বিভাগের বিভিন্ন বেঞ্চ নিম্ন বা বিচারিক আদালত থেকে আসা আপিল মামলার শুনানি করে থাকে। এর মধ্যে বিশেষ জজ আদালত, সাইবার ট্রাইব্যুনাল, মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগ পুরো বিচারিক আদালতের দেয়া বিচার পর্যালোচনা করে রায় দিয়ে থাকে।

অনেক সময় বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচারের ব্যতয় ঘটলে হাইকোর্ট ওই সংশ্লিষ্ট বিচারককে তলব করার বহু নজির রয়েছে। বিচারিক আদালতের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে হাইকোর্ট বিভাগ। বিবিসি বাংলা



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top