অদিতির ‘অ-লক্ষুণে’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তার শীর্ষে
নিশি রহমান | প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী ২০২৩, ০৫:১৭
করোনাকালে লকডাউনে সবাই পেয়েছিলেন অনেক অবসর। এ ভাইরাস যেমন আমাদের কাছ থেকে অনেক প্রিয় মানুষ কেড়ে নিয়েছে, তেমনি অনেকের জীবনে অসংখ্য ভালো কিছু যোগ করেছে। এই অতিমারির সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক অনেক সফলতার দেখা মিলেছে বিশ্বজুড়ে।
বাংলাদেশে এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন না, এমন মানুষের সংখ্যা বেশ কম। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল, সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন ও কম্পিউটার। একইসঙ্গে সবাই ব্যবহার করছেন ইন্টারনেট।
করোনাকাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত আলোচনায় আসা এক গুণী নারীর গল্পই আজ জানবেন পাঠকরা। সেই মানুষটির নাম ‘অদিতি হাফিজ শর্মী’। সদ্য কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা শুরু করবেন তিনি। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেয়েছেন হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অদিতির নামটা এখন অনেকেই জানেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রাম মাধ্যমে সমাদৃত। নিজের হাতে আঁকা ও বানানো বিভিন্ন শিল্পকর্ম তার নামের প্রচার ঘটিয়েছে। হাত- কলমে আঁকানোর পাশাপাশি নিজের উদ্যোগে মোবাইলে শিখেছেন ডিজিটাল আর্ট। এ শিল্পকর্মের জন্য বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে অদিতির অনেক ভক্ত।
নিজের আকাঁ ছবির সঙ্গে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে সুন্দর বাংলা ও হিন্দি গান জুড়ে দেন তিনি। আর যেটা সামাজিক যোগাযোগ ম্যধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেক পছন্দ। ছবি ও ভিডিও পোস্ট করার পরপরই সেসব নিয়মিত ভাইরাল হয় নেট দুনিয়ায়। যেসব পোস্টের কমেন্ট বক্স নানা ধরনের প্রশংসা বাক্যে পূর্ণ থাকে। শুধু বাংলাদেশের ভক্ত নয়। তার ভক্তের তালিকায় রয়েছে ভারত-পকিস্তানের অনেক সাধারণ মানুষ।
কবে থেকে কিভাবে শুরু করলেন শিল্পকর্মগুলো?
ছোট থেকেই এগুলার প্রতি আগ্রহ। আমার মা সেলাই-টেলাই করেনে। মেয়েদের কাজও শেখান। সুন্দর নকশা করেন। আমার বড় বোনও সুন্দর আঁকেন, নকশা করেন। আব্বু মাঝেমধ্যে আমার বড় বোনের প্র্যাক্টিকালের ছবি এঁকে দিতেন। তিনিও সুন্দর আঁকেন। তো বলা যায় জন্ম থেকেই আঁকার সঙ্গে জড়িত। বাসায় বিছানার চাদর নিয়ে আসতো আব্বু সুন্দর ফুল ফল এসব আঁকা। ওগুলা দেখে দেখে খাতায় আঁকতাম।
ডিজিটাল পেইন্টিং শুরু কিভাবে?
লকডাউনে শুরুর দিকে ইউটিউবে একটা কার্টুন দেখছিলাম। তখন হুট করে মাথায় আসলো ফোনেও তো আঁকাআঁকি করা যায়। যেহেতু কাগজকলম নিয়ে আঁকাআকি করতে আলসেমি লাগতো তাই ভাবলাম এখানে চেষ্টা করি। ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। তেমন আইডিয়া পাই নাই। তারপর ফেইসবুকে বিভিন্ন পেইজে দেখলাম তারা অনেক সুন্দর আঁকে ডিটেইলিংসহ। পরে ভাবলাম ভালোমতো আগে টুলসগুলা চিনতে হবে। পরে আঁকাআকি শুরু করতে হবে। এরপর নিজে নিজেই চেষ্টা করলাম কয়েকদিন, হয়ে গেলো৷
টাইপোগ্রাফি, ছবির গল্প আগে যেগুলো দেখা যেত, সেগুলো বন্ধ?
বন্ধ না, কিন্তু ওগুলায় তো অনেক পরিশ্রম। একদম সব আয়োজন করে বসতে হয়। এজন্য কমে গেছে।
ডিজিটাল পেইন্ট থেকে কোনো আয় হয়? এগুলো থেকে কি আয় রোজগারের কোনো ইচ্ছে আছে?
না ইনকামের বিষয়ে তো ভাবিনি মূলত। কিন্তু পেইজটায় যেহেতু বেশ ভালো ফলোয়ার হয়ে গেছে, সবাই বলে মনিটাইজেশনের জন্য চেষ্টা করতে। যদি অন হয় তাহলে ভালোই লাগবে।
আঁকানোর মাধ্যমে আরও অনেকভাবে টাকা রেজগার হয়, সেসব নিয়ে কি ভাবছেন?
আঁকা-আঁকিকে কেন্দ্র করে কয়েকজন বইয়ের প্রচ্ছদ, গানের সঙ্গে মিলিয়ে ছবি আঁকা এসব এঁকে দেয়ার অনুরোধ করছেন। যদি আমার ইচ্ছা হয়, তাদের আমি যতটুকু সম্ভব করে দেয়ার চেষ্টা করি।
কোনো ছবি আঁকতে গেলে কি ভেবে আঁকা হয়?
মূলত যখন মাথায় হুট করে যা আসে তা-ই এঁকে ফেলি৷ দেখা যায় আমি কোনো গান শুনছি, তো গানটা শুনতে শুনতেই মাথায় আইডিয়া চলে আসে হুট করে যে, এখানে এমন একটা ছবি খুব মানাবে এই গানে। এরপর এঁকে ফেলি।
রোমান্টিক ছবি বা বিষণ্ন কোনো একাকিত্বের ছবিগুলো নিজেকে ভেবে আঁকা?
আমি সবসময় একা থাকতে পছন্দ করি। একা একা সবকিছু উপভোগ করা, আকাশ-বাতাস দেখা। তো দেখা যায় আমি আমার ছবির মধ্যে কোনো একলা মেয়ে আঁকলে সেটা তখন নিজেকে চিন্তা করেই আঁকি।
ছবির সঙ্গে গানটা কি ভেবে আঁকা হয়? নাকি আঁকার পরে গান ভাবা হয়?
আমি একটা জিনিস অনেক ফলো করি। সেটা হচ্ছে শুধু র্যান্ডম ছবি আর গান জুড়ে দিলেই তো হয় না। আমার নিজের কাছেই যেই ছবিটা মনে হয়, মনে ধরছে অথবা শান্ত শান্ত অনুভব হবে সেগুলাই আমি পোস্ট দিই। না হলে পোস্ট করি না৷
যেহেতু স্থাপত্য বিদ্যায় ভর্তি হয়েছেন, অনেক চাপ থাকবে পড়ালেখার, আঁকানো তখন বন্ধ থাকবে?
আসলে আমি আমার আঁকাআঁকি সব সময়ই চলমান রাখতে চাই। এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের শখ। কিন্তু একে দায়বদ্ধতার জায়গায় নিয়ে যেতে চাই না। আবার বাদও দিতে চাই না। যা এখন যেভাবে চলছে এভাবেই সব সময় চালাতে চাই।
যখন দেশে বা বিদেশের অনেকেই প্রশংসা করে, তখন সেগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বেশি সময় দিতে ইচ্ছে হয় না?
অনেক ভালো লাগে এগুলো। কিন্তু আমি নিজেই একটা কনফিউজিং মানুষ। সবসময় মন একরকম থাকে না। দেখা যায় কয়দিন মন চায় প্রতিদিনই ছবি আঁকি। আবার দেখা যায় কিছুদিন আঁকতে মন চায় না একদম।
এসবের জন্য নিজের পড়ালেখার সময় তো কমে আসে। বাসা থেকে রাগ করে না পড়ালেখা কম হলে? আঁকাআঁকির জন্য সাপোর্ট দেয়?
বাসায় তো স্বাভাবিকভাবেই বকা দেয়, যখন একদমই পড়াশোনা বাদ দিয়ে এগুলা নিয়ে পড়ে থাকি। আমি একদম অনেক কম সময় পড়াশোনা করি। এজন্য বকা দেয়। এছাড়া তাদের ফুল সাপোর্ট আছে বলা যায়।
পেইজের নাম অলক্ষুণে কেন রাখতে ইচ্ছে হলো?
মূলত আমার নামের সঙ্গে মিলিয়ে একটা নাম রাখতে চাওয়া। এজন্য ‘অ’ দিয়ে নাম। এরপর একটা স্পেস। আর এরপর অলক্ষুণে বলতে সবাই সবসময় খারাপই চিন্তা করে। কিন্তু এই অলক্ষুণের মধ্যেও ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব। অদিতির মতো করে সাজানো নিজের একটা সুলক্ষণ। এজন্য অথলক্ষুণে। মানে অদিতির সুলক্ষণ । আর যেহেতু প্যাঁচা জিনিসটাকে সবাই অলক্ষুণে মনে করে এজন্য আমার প্রায় সব ছবির মধ্যে প্যাঁচা থাকে। এটা আমার পেইজের নামকে রিপ্রেজেন্ট করে।
সুত্র: চ্যানেল ২৪
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।