কানাডা যাচ্ছেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র পরিবারের আরও ১৪ সদস্য

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৫:০০

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ

কক্সবাজারের উখিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর পরিবারের আরও ১৪ সদস্য কানাডা যাচ্ছেন। এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তার পরিবারের সদস্যরা কানাডা যাচ্ছেন। এরআগে, ৩১ মার্চ তার পরিবারের আরও ১১ জন দেশটিতে গেছেন।

গত রোববার তারা ঢাকার উদ্দেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়েন বলে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে মুহিবুল্লাহ পরিবারের ১৪ সদস্যকে তাদের ব্যাটালিয়নের অধীনে ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।

মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্য হলেন- নিহত মুহিবুল্লাহর মা উম্মে ফজল (৬০), ছোট ভাই হাবিব উল্লাহর স্ত্রী আসমা বিবি (৩৫), সন্তান কয়কবা (১৫), বয়সারা (১৩), হুনাইসা (৯), আইমন (৮), ওরদা বিবি (৫), আশরাফ (৫) ও আরেক ভাই আহমদ উল্লাহর স্ত্রী শামছুন নাহার (৩৭), সন্তান হামদাল্লাহ (১১), হান্নানা বিবি (৯), আফসার উদ্দীন (৭), সোহানা বিবি (৫) ও মেজবাহ উল্লাহ (১)।

বিষয়টি স্বীকার করে নাম না প্রকাশের শর্তে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, মুহিবুল্লাহর মাসহ তার দুই ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্য কানাডার উদ্দেশে ক্যাম্প ত্যাগ করছেন। তাদের এখানকার প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা সেখান থেকে কানাডায় রওনা দেয়া কথা রয়েছে। ক্যাম্প থেকে যাত্রাকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারে প্রতিনিধিসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরআগেও একই প্রক্রিয়ায় মুহিবুল্লাহ নিহতের ছয় মাস পর তার পরিবারের ১১ সদস্যকে কানাডা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টের রোহিঙ্গা জিয়াবুল হক বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মুহিবুল্লাহর দুই ভাইয়ের পরিবারের ১৪ সদস্যকে কানাডা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ক্যাম্প থেকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সময় পুলিশসহ জাতিসংঘের সংস্থার লোকজনও ছিলেন।

গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং-১ (ইস্ট) লম্বাশিয়া ক্যাম্পের ডি-৮ ব্লকে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ। মিয়ানমারের মংডুতে স্কুলে শিক্ষকতা করতেন বলে রোহিঙ্গাদের কাছে তিনি ‘মুহিবুল্লাহ মাস্টার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই মুহিবুল্লাহর স্বজন ও অনুসারীরা হন্যে হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তারা।

গত বছরের অক্টোবরে মুহিবুল্লাহর ভাগ্নে ও আরএসপিএইচআরের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রশিদুল্লাহ বলেছিলেন, মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তান, মা, ভাইসহ স্বজনদের ১৮টি পরিবারের সদস্যরা কুতুপালং ক্যাম্পে নিরাপদ মনে করছেন না। এসব পরিবারের ৯৪ জন সদস্যকে বর্তমানে ক্যাম্পের বাইরে অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে তারা সেখানে থাকতেও রাজি নয়।

মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার ছাড়া অন্য কোনো দেশে (থার্ড কান্ট্রি) আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন তারা। আবেদনে তারা যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার নাম উল্লেখ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৭ অক্টোবর মুহিবুল্লাহর স্ত্রী, সন্তানসহ ১১ জন কানাডায় যাত্রা পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে মুহিবের স্ত্রী নাসিমা খাতুন, ৯ ছেলেমেয়ে ছাড়াও এক মেয়ের জামাইও ছিল। তাদের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহযোগিতায় কানাডার সরকারি কর্মসূচির আওতায় ‘শরণার্থী’ হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর গত মার্চে মহিবুল্লাহর স্ত্রী নাসিমা খাতুন, নয় ছেলেমেয়ে এবং এক মেয়ের জামাইসহ ১১ জন ইউএনএইচসিআরের তত্ত্বাবধানে কানাডায় পাড়ি দেন।

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top