বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের ৮ ধাপ অবনতি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২২, ০১:০০

ক্ষুধা

সূচকে গত বছরের তুলনায় এবছর বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। আরও আট ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ এখন ৮৪তম স্থানে। যা গত বছরে ছিল ৭৬তম স্থানে। বৃহস্পতিবার (১৩ই অক্টোবর) আয়ারল্যান্ড ও জার্মান-ভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৩৫টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা মারাত্মকভাবে বেড়েছে।

এদিকে, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির হার ক্রমশ বাড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এমন মূল্যস্ফীতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই মূলত দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।

প্রতি বছরের মত এবারো বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক প্রকাশ করেছে আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মানির ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েল্টহাঙ্গারহিলফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি এখন বিরাজ করছে দক্ষিণ এশিয়ায়।

বিশ্বের ১২১টি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিশু স্বাস্থ্য আর সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকে মাপকাঠি ধরে এই সূচক তৈরি করা হয়। বিবেচনায় রাখা হয় অপুষ্টি, পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন প্রভৃতি।

চলতি বছরের সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে ১৩ দশমিক  ৬ স্কোর নিয়ে ৬৪তম শ্রীলংকা ও ১৯ দশমিক ১ স্কোরে ৮১তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। এ ছাড়া ১৫ দশমিক ৬ স্কোরে ৭১তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার। ক্ষুধা নির্মূলে এ বছর শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো বেলারুশ, বসনিয়া হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন ও ক্রোয়েশিয়া। তার তালিকার তলানিতে অবস্থান করা পাঁচ দেশ হলো যথাক্রমে ইয়েমেন, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া।

এদিকে, বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনও বেড়েই চলেছে। যা বিশ্ব নেতাদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর মাসে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক চার এক শতাংশে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে দেশটিতে। কয়েক দফা সুদের হার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে না পারায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়েছে। বছরের শেষ নাগাদ সেখানে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্র তহবিল-আইএমএফ। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও ৪৫ বিলিয়ন পাউন্ড কর ছাড় দেওয়ার ঘোষণার প্রভাবে দেশটির এ অবস্থা বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে আইএমএফ।

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। স্পেন ও জার্মানিতে মূল্যস্ফীতির হার কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কাতে দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

এদিকে, করোনা অতিমারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জার্মানির আন্তর্জাতিক আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আলিয়াঞ্জ জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বে সম্পদ বৃদ্ধির হার চার দশমিক ছয় শতাংশে পৌঁছাবে। যা গত তিন বছরে সম্পদ বৃদ্ধির গড় হারের অর্ধেকেরও কম।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সিইও ডমিনিক ম্যাকসরলি বলেন, আমাদের এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক। সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং করোনা মহামারি ইতোমধ্যেই লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির সংকটে ফেলেছে। প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের দাম। এরমধ্যেই এখন ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্যে আঘাত হেনেছে। আর এ সংকট ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বের জন্যই বিপর্যয়কর রূপ নিতে শুরু করেছে বলে সতর্ক করেন তিনি।

 

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top