দেশের চূড়ান্ত জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১৮:৫৯
জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার ২০৩ জন, নারী ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২০ জন। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বেশি।
এরআগে, গত বছর মাঝামাঝি প্রকাশিত শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫১ লাখ। শুমারি-পরবর্তী যাচাইয়ে (পোস্ট ইনিউমারেশন চেক) আরো ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন বেড়েছে।
গতকাল রবিবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে চূড়ান্ত এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের যন্ত্র আছে, জ্ঞান আছে, জনবল আছে। সরকারি কর্মকর্তা আছে। তাহলে কেন জনসংখ্যার তথ্য জানার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে? জনশুমারির পেছনে কেন দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হবে? এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো দেশগুলো কীভাবে জনসংখ্যার হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে, তা পর্যালোচনা করতে বিবিএসকে নির্দেশ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেন।
প্রতি ১০ বছর পর পর দেশে জনশুমারি করে আসছে বিবিএস। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান আইনে ‘আদমশুমারি’র পরিবর্তে ‘জনশুমারি’ করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী ২০২১ সালে জনশুমারি হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারি ও ট্যাব কেনা নিয়ে জটিলতায় এক বছর পর ষষ্ঠ জনশুমারি হয় ২০২২ সালে। ওই বছর ১৫ থেকে ২১ জুন দেশজুড়ে জনশুমারি ও গৃহগণনা করা হয়। এক মাসের ব্যবধানে শুমারির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বিবিএস। তখন বলা হয়, দেশে জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ।
বিবিএসের শুমারিতে কতসংখ্যক মানুষ বাদ পড়েছে, তা জানতে আলাদাভাবে জরিপ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ করা প্রতিবেদনে বিআইডিএস জানায়, বিবিএসের শুমারিতে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ৪৭ লাখ মানুষ বাদ পড়েছে। তাদের যোগ করলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ কোটি ৯৮ লাখে। এবার সেই সংখ্যাই প্রকাশ করা হলো।
প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, সবচেয়ে বেশি মানুষের বসবাস ঢাকা বিভাগে, ৪ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৭ ভাগ। সবচেয়ে কম মানুষ বাস করে বরিশাল বিভাগে ৯৩ লাখ, যা মোট জনগোষ্ঠীর সাড়ে পাঁচ শতাংশ। মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটি ৪৫ লাখ বা ৯১ ভাগ। অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লাখ বা ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কত সংখ্যক প্রবাসী বসবাস করেন, এবারের জনশুমারিতে তা প্রকাশ করার কথা থাকলেও সে তথ্য দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত আছে। ঐ সময়ের মধ্যে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসীদের তথ্য দেওয়া হবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কতসংখ্যক প্রবাসী বসবাস করছেন, তা জানতে সবার আগ্রহ আছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তথ্যটি প্রকাশ করা যেত। এটা তেমন কঠিন ছিল না।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে হিজড়া ১২ হাজার ৬২৯ জন। মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ পল্লিতে এবং ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সি ১ কোটি ৭১ লাখ ৬০ হাজার ১৭৫ জন। অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ১০ শতাংশ তরুণ। সবচেয়ে কম হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৮ বছর বয়সি মানুষ।
জনসংখ্যার হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। শহরের বসবাস করে ৩১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর গ্রামে ৬৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। গ্রামে বসবাস করে ১১ কোটি ৬১ লাখ মানুষ। আর শহরে ৫ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক লভ্যাংশ স্তরে রয়েছে। অর্থাৎ কোনো দেশের ক্ষেত্রে কর্মক্ষম মানুষ কর্মক্ষমহীন মানুষের চেয়ে বেশি হলে তখন তাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড স্তর বলে ধরে নেয়া হয়। এর বাইরেও অনেক বড় একটি অংশ তরুণ। ফলে এ স্তরে থাকাকালে একটি দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখার সুযোগ হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড স্টেজে আছি। বিশেষ করে কর্মক্ষম মানুষ মোট জনসংখ্যার যদি বড় অংশ থাকে তাহলে যেকোনো দেশ কিছু সুবিধা পায়। কারণ তরুণ ও কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি থাকে। তারা অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। এ সুযোগ সাধারণত আগামী ১৫ বছর স্থায়ী হবে। এ সময়ে যদি আমরা তরুণদের যথাযথ ব্যবহার করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমরা সুযোগটা হারাব।
তিনি বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের চেয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ দুই খাতে যতটুকু বিনিয়োগের প্রয়োজন ছিল তা কিন্তু আমরা করিনি। এখনই উদ্যোগ না নেয়া গেলে যতটুকু সম্ভাবনা রয়েছে তাও আমরা হারাব। তরুণ জনগোষ্ঠী যারা আছে তারা অনেকে পড়াশোনা করছে। যথাযথ শিক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তারা উন্নয়নে অবদান রাখবে। সময় পেরিয়ে গেলে বিনিয়োগ করলেও কোনো লাভ হবে না। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এ বিষয়টি থাকলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
বিষয়: জনসংখ্যা বাংলাদেশ জনশুমারি গৃহগণনা চূড়ান্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস newsflash71
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।