দুই মাস ধরে এভারকেয়ারে খালেদা জিয়া ! কেমন আছেন তিনি ?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৩৪

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই মাস ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। লিভার সিরোসিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। তার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সোমবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।

মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে। তেমন কোনো উন্নতি নেই। কেবিনে রেখেই তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পেটে পানি আসছে। পেটের পানিটা বেড়ে গেলেই শ্বাসকষ্ট হয়। দুই-তিনদিন পরপর পানি অপসারণ করতে হচ্ছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে সম্ভব ও সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা তাঁকে দেওয়া শেষ হয়েছে। এরচেয়ে বেশি আর এখানে কিছু করা সম্ভব নয়। তবে যেহেতু তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই দেশে রেখে জোড়াতালি দিয়ে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যখন যে রোগ দেখা দিচ্ছে, ওষুধ দিয়ে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এ অবস্থা থেকে উন্নতি লাভ করে তিনি কবে হাসপাতাল থেকে আবার বাসায় ফিরে যেতে পারবেন তা বলা সম্ভব নয়।

বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকার নিজ থেকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবে না, এটা এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়া নিজেও কোনো সমঝোতার মাধ্যমে বিদেশ যেতে চান না। তাকে এখন বিদেশ পাঠাতে হলে মাঠে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে জনমত গঠন করতে হবে। দল থেকে সেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

আর পরিবার তাদের মতো চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ৪০১ ধারা অনুযায়ী ম্যাডামকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব নয় বলে পরিবারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সরকার। ফলে এখন পরিবার তার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে, তারা দল থেকে কোনো সহযোগিতা চাইলে আমরা করব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে এটা কীভাবে আশা করেন। এখন দেশে যতটুকু চিকিৎসা সম্ভব সেটুকু করতে হবে। মরতে তো সবাইকে হবে। কেউ আগে মরব, কেউ পরে। কিন্তু মরণতো আর শেখ হাসিনার হাতে নেই। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও মুক্তি নিয়ে বিএনপির করণীয় প্রশ্নে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, যেটা করা দরকার সেটা তো করছি। আমরা তো আর কাউকে খুন করতে পারব না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যা করা দরকার তাই করছি।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। ডাক্তাররা বলেছেন দেশে সুচিকিৎসা দেওয়া সম্ভব না। আমরা অনেকদিন ধরেই তাকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলছি। কিন্তু সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, এখন একেবারে শেষ সময় চলে এসেছে। অনতিবিলম্বে বিদেশে নেওয়া দরকার, না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। যদিও সিসিইউ থেকে তাকে কিছুক্ষণ আগে কেবিনে আনা হয়েছে। এতে স্বস্তির কোনো কারণ নেই, এটাকে স্থিতিশীলও বলা যাবে না। তার শারীরিক অবস্থা উঠানামা করছে।

গত বছরের ১০ জুন গভীর রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত এনজিওগ্রাম করে তার হার্টে একটি রিং বসানো হয়। হার্টের দুটি ব্লক এখনো রয়ে গেছে।

এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। গত বছরের ২২ আগস্টও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এক সপ্তাহ পর ২৮ আগস্ট ফের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে ভর্তি করানো হয়। দুদিন হাসপাতালে থাকার পর ৩১ আগস্ট বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।

খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে গিয়েছিলেন। দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িক মুক্তি’ দেয় সরকার। এর পর কয়েক দফা তার দণ্ডাদেশ স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top