সংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে যা জানা গেল

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১৪:২২

ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টায় তিনি মারা যান।

তার ভাই প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ গণমাধ্যমকে জানান, আজও (গতকাল) তানপুরা নিয়ে তার বড় ভাই সংগীতচর্চা করেন। সন্ধ্যার পর হঠাৎ দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। তখন দরজা ভেঙে সাদি মহম্মদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তার লাশ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত বছরের ৮ জুলাই সাদি মহম্মদের মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ (৯৬) বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই ট্রমার মধ্যে চলে যান সাদি মহম্মদ। এরপর মানসিকভাবে স্বাভাবিক ছিলেন না তিনি। মা হারানোর বেদনা সম্ভবত তিনি নিতে পারেননি। এভাবেই চলছিল তার জীবন।

বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলেন সাদী মোহাম্মদ। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মন বসাতে পারেননি তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াকালীন ১৯৭৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে শান্তিনিকেতনে সংগীত নিয়ে পড়তে যান। বিশ্বভারতী থেকে রবীন্দ্রসংগীতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন।

ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্রসংগীতে পড়াশোনা করা সাদী মোহাম্মদের বাবা শহিদ সলিমউল্লাহ। ১৯৭১ সালে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের সি-১২/১০ বাড়িটি ছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা সলিম উল্লাহর বাড়িতে নিয়মিত বৈঠকে আসতেন দলের শীর্ষ নেতারা, আসতেন বঙ্গবন্ধুপুত্র শহীদ শেখ কামালও।

একাত্তরের ২৩ মার্চ তাজমহল রোডের সেই বাড়িতে ছেলে সাদি মহম্মদের আঁকা বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান বাবা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা সেলাই করে দিয়েছিলেন সাদি-শিবলীর মা জেবুন্নেছা সলিমউল্লাহ। সেই পতাকা ওড়ানোর সূত্র ধরে একাত্তরের ২৬ মার্চ অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে সলিমউল্লাহর বাড়ি। পুরো বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সাদি মহম্মদের বাবা সলিমউল্লাহকে ১৯৭১ সালে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি। আর তার বাবার নামেই ঢাকার মোহাম্মদপুরের সলিমউল্লাহ রোডের নামকরণ করা হয়েছে।

২০০৭ সালে ‘আমাকে খুঁজে পাবে ভোরের শিশিরে অ্যালবামের মাধ্যমে সুরকার হিসেবে অভিষেক হয় সাদি মহম্মদের। এরপর ২০০৯ সালে ‘শ্রাবণ আকাশে’ ও ২০১২ সালে ‘সার্থক জনম আমার অ্যালবাম প্রকাশ হয় তার।

২০১২ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয় চ্যানেল আই। ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি থেকে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। সাংস্কৃতিক সংগঠন রবিরাগের পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বাসায় যে ঘরে বসে সাদি মহম্মদ গান করতেন, সেখানেই তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো এক সময় এই ঘটনা ঘটে। বাসার লোকজন ডাকাডাকি করে তার সাড়া না পেয়ে দড়জা ভেঙে ভেতরে লাশ ঝুলতে দেখে। পরে খবর পেয়ে রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

 

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top