আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১২ দিন পর জামিন ১৬ বছরের সেই শিক্ষার্থীর
মেহেদী হাসান | প্রকাশিত: ১ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:৪০

কোটা সংস্কার আন্দোলনে রংপুরে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের কলেজছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমের জামিন মঞ্জর করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা পৌনে একটার দিকে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ আদেশ দেন। কিশোরের আইনজীবী আবদুল মোকছেদ বাহালুল প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আইনজীবী আবদুল মোকছেদ বাহালুল প্রথম আলোকে বলেন, ৪ আগস্ট এই কিশোরের জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ সকালে তার আগাম জামিন শুনানির জন্য আদালতে আবেদন দেওয়া হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কিশোরের জামিন মনজুর করেন। তবে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়নি।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শারমিন আফরোজ। তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এই কিশোর রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। তবে পুলিশ মামলায় তার বয়স উল্লেখ করে ১৯ বছর।
এর আগে বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই মাহিমকে কারাগারে পাঠান আদালত। তবে মাহিমকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি এতদিন অগোচরেই ছিল।
এদিকে বুধবার (৩১ জুলাই) একমাত্র ছোট ভাইয়ের কোনো খোঁজ না মেলায় মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে লেখেন, গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলে যায়। পরে পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না– তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো লেখেন, আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর, তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কী রায় দেবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেয়া হোক এটা চাই।
মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালালের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। তিনি আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন মাহিমকে ছেড়ে দেয়া হবে।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয় আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে। তাকে গ্রেফতার ও কারাগারে আটকের ঘটনা নিয়ে তার বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
মাহিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে— তার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ওইদিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে (আলফি) বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।
জিল্লুর রহমান আরো বলেন, ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেয়া হয়। যাই হোক আজকে তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। তার জামিন হয়েছে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেয়ার কথা বলেছেন স্যার।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।