মমতার পদত্যাগের দাবিতে রণক্ষেত্র কলকাতা
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:৩৭
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখ্যপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে পুরো পশ্চিমবঙ্গ। বিক্ষোভকারীরা সেখানকার সচিবালয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। আর তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাসের সেল ও জলকামান নিক্ষেপ করেছে দাঙ্গা পুলিশ। অন্যদিকে, বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) মহাত্মা গান্ধী সড়ক, কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুল, সাঁতরাগাছি এবং হাওড়া সেতু এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ইটের আঘাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্যের মাথা ফেটে গেছে। বিক্ষোভের কারণে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়, অনেকেই মেট্রো ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত আরজি কর হাসপাতালে এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। পরে এই আন্দোলন মমতার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়। ‘দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ’ প্ল্যাকার্ডে এসব স্লোগান লিখে রাস্তায় নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার বিক্ষোভকারীরা পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নে প্রবেশের চেষ্টা করলে সেখানে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে। অন্যদিকে, পুলিশকে প্রতিরোধ করতে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সচিবালয়ে প্রবেশ করেছেন এবং বিক্ষোভ চলার সময় সেখানে অবস্থান করছেন। বিক্ষোভকারীদের উপর যদি পুলিশ কোনো নির্যাতন চালায় তাহলে কঠোর অবস্থানে যাবেন বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের সচিবালয় ঘেরাও আন্দোলনে তিনি পাশে থাকবেন। যদি পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর শক্তি প্রয়োগ ও তাকে বাধা প্রদান করে তাহলে রাস্তা অবরোধ করবেন। ইতিমধ্যে বহু জায়গা থেকে অত্যাচারের খবর আসছে। যদি এটি চলতে থাকে তাহলে কাল বুধবার পুরো পশ্চিমব্ঙ্গকে স্তব্ধ করে দেওয়া হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পদত্যাগের এক দফা দিবিতে পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজের ডাকে শত শত মানুষ সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার লক্ষ্যে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ার গ্যাসের সেল ও জলকামান ব্যবহার করেছে। তবে বিক্ষোভকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, প্রতিবাদ মিছিলের জন্য কোনও অনুমতি দেয়া হয়নি ছাত্র-জনতাকে। এ ছাড়াও শাসক তৃণমূল কংগ্রেস গতকাল সমাবেশে সহিংসতা তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীদের যেকোনও পথ থেকে সচিবালয়ের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দিতে প্রায় ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর নজর রাখতে ড্রোনও ব্যবহার করা হয়।
গত ৯ আগস্ট কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা নাড়িয়ে দেয় পুরো ভারতকে। এরপর থেকেই বিচার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আহ্বানে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকি রাজ্যের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরতে শুরু করেছেন।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।