আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চাওয়া রিট হাইকোর্টে খারিজ
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪০
ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন বাতিল চেয়ে দায়ের করা রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মাহবুবুল উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
‘সারডা সোসাইটি’ নামে একটি সংগঠনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়া গত ১৯ আগস্ট রিটটি করেছিলেন। আদালতে রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেদওয়ান আহমেদ রানজিব।
গত ২৭ আগস্ট আদালত রিটের ওপর শুনানি নেন। পরবর্তী শুনানির জন্য ১ সেপ্টেম্বর তারিখ রাখেন আদালত। শুনানিতে রিট আবেদনকারী বলেন, আওয়ামী লীগকে পক্ষ না করা ভুল হয়েছে। রিটটি ‘নট প্রেস’ করে নেওয়ার কথা জানান তিনি। শুনানি নিয়ে একপর্যায়ে আদালত বলেন, রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়। রিটটি সরাসরি খারিজ করা হলো।
গত ২৭ আগস্টের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছিলেন, দেশের সংবিধান মানুষের রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার দেয়নি। বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।
রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় এবং ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিনের শুনানিতে বলেন, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ববাদের অবসানের পর অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব পালন করছে। এই সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাইবে—কেউ এটি প্রত্যাশা করলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এই সরকার মনে করে, মানুষের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাজনৈতিক দল অন্যতম প্ল্যাটফর্ম।
অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে বলেন, একটি সংগঠনকে বন্ধ করে দিয়ে, হাজার হাজার, লাখ লাখ সমর্থক, আদর্শে যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার বিরুদ্ধে এই সরকার। এ ধরনের রিট যদি গ্রহণ করা হয়, তা সংবিধানের মৌলিক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী হবে।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতাকর্মী আছেন, যারা তাদের আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাই তাদের সে বিশ্বাসের দল নিষিদ্ধ করা আদালতের কাজ নয়। ‘বিচারপতি তোমার বিচার করবে কারা, জেগেছে আজ জনতা’ এমন শ্লোগানের প্রেক্ষাপটে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে যে নতুন স্বাধীনতা এসেছে, সেখানে সবার বাকস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হতে হবে। তাই রাজনৈতিক দল পরিচালনার স্বাধীনতা এসময় বন্ধ হতে পারে না।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমরা দেখেছি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়েছে। যেটি আমাদের কারোরই কাম্য ছিল না। বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের সাথে বিচার বিভাগের সমর্থনের ও অবিচারের প্রেক্ষাপটেই এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী হিসেবে বিচার বিভাগে কোন আক্রমণ হলে সেটি আমাদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণেরই বিষয়। তাই কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে মাঠের রাজনীতি আদালতে টেনে আনা ঠিক না। আর কোন রাজনৈতিক দল এই রিট নিয়ে আদালতে আসেনি।
সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল রিটটি খারিজ চেয়ে হাইকোর্টকে বলেন, ‘এই রিটটি যাদের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, সেই আওয়ামী লীগকে রিটে পক্ষভূক্ত করা হয়নি এবং কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। এই রিটের কোন লোকাস স্ট্যান্ডই নেই। এই রিট মেনটেনেবল নয়। তাই রিটকারিকে কস্ট (জরিমানা) করার আবেদন করছি।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।