অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে ড. ইউনূস যা জানালেন

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৮:৩৯

ফাইল ছবি

গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের পতন ঘটে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের কর্তৃত্ববাদী সরকার শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব শেষ হয়। পালিয়ে যান ভারতে। জুলাই আগস্ট আন্দোলনের সময় ফ্রান্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সেখানে থেকে কীভাবে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পান, ঢাকায় আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মুঠোফোনে তার কী কথা হয়, এক খোলামেলা আলোচনায় সেগুলো জানালেন তিনি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় ‘রাখমান রিভিউ’ নামে একটি পডকাস্টে সেসব বিষয় তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরে এই পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে কথোপকথন বৃহস্পতিবার লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

সেখানে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমি যখন প্রথম ফোনকল পাই, তখন আমি প্যারিসের হাসপাতালে ছিলাম। আমার ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) ফোন দিল। যদিও আমি বাংলাদেশে কী ঘটছে, সেসব খবর প্রতিদিন মুঠোফোনে দেখতাম। তখন তারা বলল, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) চলে গেছেন। এখন আমাদের সরকার গঠন করতে হবে। দয়া করে, আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন। ’ আমি বলেছিলাম, না, আমি সেই ব্যক্তি নই। আমি এর কিছুই জানি না। আমি এর সঙ্গে যুক্ত হতেও চাই না।

কারা যোগাযোগ করেছিল- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা। আমি তাদের কাউকেই চিনতাম না। কখনো তাদের সম্পর্কে শুনিনি। কাজেই আমি তাদের বিকল্প কাউকে খোঁজার বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। তাদের বলেছিলাম, বাংলাদেশে অনেক ভালো নেতা আছেন। তোমরা তাদের খুঁজে নাও। তারা বলছিল, ‘না, না, না। আপনাকেই থাকতে হবে। আমরা কাউকে পাইনি। ’ আমি বলেছিলাম, আরও চেষ্টা করো। তারা বলল, ‘তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই। ’ তখন বলেছিলাম, অন্তত একটা দিন চেষ্টা করো। না পেলে ২৪ ঘণ্টা পর আমাকে আবার ফোন করো।

তিনি বলেন, তারা (ছাত্রনেতারা) আবার আমাকে ফোন করল। বলল, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আপনাকে অবশ্যই দেশে ফিরতে হবে। ’ শেষ পর্যন্ত আমি বললাম, দেখো, তোমরা রাজপথে জীবন দিয়েছো। প্রচুর রক্তক্ষয় হয়েছে। তোমরা সম্মুখসারিতে আছো। যেহেতু তোমরা এসব করতে পেরেছো, এখন ইচ্ছা না থাকলেও তোমাদের জন্য আমারও কিছু করা উচিত। আর এটাই সেই সময়। সরকারের সংস্কার করতে হবে। আমি রাজি। তোমরা কি একমত? তারা আর কোনো কথা বলেনি।

সেই দিনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ঘণ্টা দুয়েক পর হাসপাতালের একজন নার্স এলেন। তিনি আমাকে একটি ফুলের তোড়া উপহার দিলেন। আমি বললাম, এটা কেন? তখন ওই নার্স বললেন, “আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’, আমরা এটা জানতাম না। ” আমি বললাম, এটা আপনি কোথা থেকে জানলেন? তখন তিনি বললেন, “সব গণমাধ্যমে, সব টেলিভিশনে সংবাদ প্রচার হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’। ” আমি বললাম, আমি আপনার কাছ থেকেই এটা জানলাম।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এরও ঘণ্টা দুয়েক পর ওই বোর্ড সদস্যরাদসহ হাসপাতালের প্রধান আসেন। তারা ফুলের তোড়া দিয়ে নতুন ‘প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাকে শুভেচ্ছা জানান। সঙ্গে এটাও বলেন যে বিকেলের আগে আমাকে হাসপাতাল ছাড়ার বিষয়ে অনুমতি দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, পরে সকালে ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল আমাকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে আসে। এটাই ছিল দেশে ফেরার আগের ঘটনাবলি। পুরো জাতি আমার ফেরার উড়োজাহাজের অপেক্ষায় ছিল। বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে যাত্রা করেছিলাম। তখন তারা (ছাত্রনেতারা) নতুন সরকারের রূপরেখা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমি বিমানবন্দর থেকেই জাতির সামনে ভাষণ দিলাম। সবাইকে ধৈর্য, শান্তি, একতা বজায় রাখতে বললাম। এটাই ছিল পুরো ঘটনার শুরু।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top