‘জনতাই বৈধতা’ লিখে কী বার্তা দিলেন নাহিদ ইসলাম
রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৯:৫১

নানা জল্পনা কল্পনার পর অবশেষে অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নাহিদ ইসলাম। আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পরে তিনি পতাকাবিহীন গাড়িতে করে যমুনা ছাড়েন।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, বর্তমান পটভূমিতে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাঁর ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা থেকে সদ্য পদত্যাগ করা নাহিদ ইসলাম ‘জনতাই বৈধতা’ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি এ কথা লিখেছেন।
হাজারো ছাত্র-জনতার মাঝে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি পোস্ট করে ‘জনতাই বৈধতা’ বার্তাটি শুধু একটি বার্তা নয়, বরং একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।
মঙ্গলবার দুপুরে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব তার পদত্যাগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে নাহিদ ইসলামের পদত্যাগপত্র প্রকাশ্যে এসেছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে আবেদন করেছেন নাহিদ ইসলাম।
পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
‘বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগদানের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি।’
নাহিদ ইসলাম আরো লিখেছেন, ‘এমতাবস্থায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।’
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। নতুন এই দলের আহ্বায়ক পদে দেখা যেতে পারে নাহিদ ইসলামকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন নাহিদ ইসলাম। পরে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে উপদেষ্টা হন নাহিদ ইসলাম।
বিষয়: জনতাই বৈধতা বার্তা নাহিদ ইসলাম
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।