মৃত্যুর ১৪ বছর পর স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন আজম খান
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২৫, ১৫:৪৫

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৫ পাচ্ছেন আটজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এর মধ্যে পপসম্রাট আজম খান আছেন বলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এ খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই আজম খানের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তিতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মৃত্যুর ১৪ বছর পর এ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন তিনি।
পুরো নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান হলেও সঙ্গীতাঙ্গনে তিনি আজম খান নামে পরিচিত। অনেকে তাকে গুরু সম্বোধন করে থাকেন। ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনির ১০ নম্বর কোয়ার্টারে জন্ম তার। বাবা আফতাবউদ্দিন আহমেদ, মা জোবেদা খাতুন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের একটি প্রজন্মকে রক-পপে প্রভাবিত করেছেন আজম খান। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা উপমহাদেশেও আজম খান পেয়েছিলেন অসাধারণ জনপ্রিয়তা।
আজম খান ১৯৫৫ সালে প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সাল থেকে তিনি পরিবারের সঙ্গে কমলাপুরে থাকা শুরু করেন এবং আমৃত্যু সেখানেই ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় আজম খান ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ১৯৭০ সালে তিনি টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন।
১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন আজম খান। কুমিল্লার সালদায় প্রথম সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের সেকশন ইনচার্জ। সেকশন কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
একসময় যাত্রাবাড়ী-গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। তার নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল 'অপারেশান তিতাস'।
স্বাধীনতার পর তার ব্যান্ড 'উচ্চারণ' আলোড়ন তুলেছিল। ১৯৭২ সালে 'এত সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে' ও 'চার কালেমা সাক্ষী দেবে' গান দুটি বিটিভিতে প্রচারের পর ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
১৯৭৪ সালে বিটিভিতে 'রেললাইনের ওই বস্তিতে' শিরোনামের গানটি গেয়ে আলোচনায় আসেন আজম খান।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম ক্যাসেট 'এক যুগ'। ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায় তার গাওয়া গানের প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে।
আজম খানের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকায় রয়েছে: 'আমি যারে চাইরে', 'ওরে সালেকা ওরে মালেকা', 'আলাল ও দুলাল', 'অ্যাকসিডেন্ট', 'অনামিকা', 'অভিমানী', 'আসি আসি বলে', 'হাইকোর্টের মাজারে', 'পাপড়ি', 'বাধা দিও না', 'যে মেয়ে চোখে দেখে না' ইত্যাদি।
গানের পাশাপাশি ১৯৮৬ সালে 'কালা বাউল' নামে হিরামন সিরিজের নাটকে অভিনয় করেছিলেন আজম খান। ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত 'গডফাদার' সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন আজম খান।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।