রেমিট্যান্স ও কর্মসংস্থানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন
সৌদি আরবের সঙ্গে সাধারণ কর্মী নিয়োগে প্রথম দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর
বাসস | প্রকাশিত: ৭ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সোমবার (৬ অক্টোবর) রিয়াদে স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ চুক্তিকে দুই দেশের মধ্যে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি সরকারের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
এটি দুই দেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক পাঠানো শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত, যারা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি কার্যকর হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
চুক্তির মাধ্যমে এখন বাংলাদেশ থেকে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মী অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কর্মীদের আকামা নবায়ন, এক্সিট ভিসা প্রদান এবং অধিকার সংরক্ষণের বিষয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হয়। তিনি বলেন,
“বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে আমরা প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করব। এর মাধ্যমে সৌদি আরব আরও গুণগত শ্রমশক্তি পাবে।”
জবাবে সৌদি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী বলেন,
“বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এক নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।”
বৈঠকে আরও আলোচনা হয়-
-
বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন
-
ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা চালু
-
নারী কর্মীদের সুরক্ষা
-
অবৈধ দালাল চক্র দমনে যৌথ মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার বিষয়ে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলওয়ার হোসেন, মিশন উপপ্রধান এস. এম. নাজমুল হাসান, শ্রম কাউন্সেলর মুহাম্মাদ রেজায়ে রাব্বী এবং দুই দেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
এই ঐতিহাসিক চুক্তিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,
“দক্ষ কর্মী রপ্তানি শুধু রেমিট্যান্স বাড়াবে না, এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিকেও আরও উজ্জ্বল করবে।”
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।