চীন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে অন্তর্বর্তী সরকার
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:০৩
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষা আমদানি সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য উইক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া–কে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে এসওয়াই-৪০০ (DF-12A হিসেবে পরিচিত) ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কিনবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণ কর্মসূচির অংশ, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা লক্ষ্য করা হয়েছে।
সূত্রের বরাতে জানা গেছে, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা খাতে যে সামগ্রী আমদানি হয়েছে তার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি বেইজিং থেকে এসেছে। এমন পরিবেশে জে-১০সি যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনা সম্পর্কে সাংবাদিক তৎপরতার ঠিক পরেই এসওয়াই-৪০০ কেনার খবরটি সামনে আসে।
ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এসওয়াই-৪০০–কে চীনে স্থানীয়ভাবে DF-12A নামে চিনে; এটি প্রথমবার প্রকাশ্যে ২০০৮ সালে ঝুহাই এয়ারশোতে প্রদর্শিত হয়। বর্তমানে চীনিয় পিপলস লিবারেশন আর্মি ছাড়াও কাতার ও মিয়ানমার এই সিস্টেম ব্যবহার করছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
প্রযুক্তিগত বর্ণনায় বলা হয়েছে, এসওয়াই-৪০০–এর আধুনিক সংস্করণগুলোর কার্যকরী পরিসীমা প্রায় ২৮০ কিলোমিটার। স্ট্যান্ডার্ড কনফিগারেশনে প্রায় আটটি ক্যানিস্টার থাকে এবং ক্যানিস্টারে প্লেস করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সংরক্ষণের জন্য অনুকূল — ফ্যাক্টরিতে লোড করা অবস্থায় অতিরিক্ত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সীমিত।
প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্রের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬ মিটার, ব্যাস প্রায় ০.৪ মিটার; ওয়ারহেড কনফিগারেশনের উপর নির্ভর করে ওজন ৯০০ থেকে ১,৩০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। ওয়ারহেড হিসেবে উচ্চ-বিস্ফোরক ফ্র্যাগমেন্টেশন, সাবমুনিশন ডিসপেন্সার বা ক্লাস্টার পেলোডের মতো বিকল্প থাকতে পারে।
রিপোর্টটি জানাচ্ছে যে এসওয়াই-৪০০–এ সক্রিয় রাডার, প্যাসিভ রাডার বা ইনফ্রা-রেড (IIR) সিকার রয়েছে, যা ক্ষেপণাস্ত্রকে টার্মিনাল পর্যায়ে লক্ষ্য শনাক্তকরণ এবং প্রাসঙ্গিকভাবে ট্র্যাকিংয়ে সক্ষম করে। যথাসম্ভব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাধা এড়াতে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কিছু পরিমাণ টার্মিনাল কৌশলও প্রয়োগ করতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
তথ্য অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ম্যাক্সিমাম স্পিড ম্যাক ৫.৫ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম এবং হাইব্রিড গাইডেন্স স্যুট (ইনর্শিয়াল নেভিগেশন + স্যাটেলাইট অগমেন্টেশন/জিপিএস) দ্বারা সঠিকতা নিশ্চিত করে। এছাড়া প্রতিটি সিস্টেম লঞ্চের জন্য মাত্র ১০ মিনিটেরও কম সময়ে প্রস্তুত করা যায় এবং দ্রুতভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ছোট রকেট দিয়ে পুনরায় লোড করা সম্ভব।
সামরিক আমদানির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর কিছু থিংকট্যাং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে এটি প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছে। তবে সরকারিক কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র বা চুক্তি এখনও প্রকাশ করা হয়নি বলে সরকারি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রতিরক্ষা সম্পর্ক দ্রুত বদলে যাওয়া অবস্থায়, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও তথ্য প্রকাশ পেলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি বা চুক্তি ডকুমেন্ট তুলে ধরা উচিত—বিশেষত যে কোনো সরঞ্জাম কেনা-বেচার ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের ক্ষমতা ও সামরিক ভারসাম্যকে বিবেচনায় রেখে সুস্পষ্ট উদ্বেগ ও জবাবদিহিতা রাখা জরুরি।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।