সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

বাংলাদেশে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব: ভ্যাকসিন থাকলেও কেন পাওয়া যাচ্ছে না দেশে

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৫৯

সংগৃহীত

বাংলাদেশে ডেঙ্গু আর মৌসুমি রোগের তালিকায় নেই; বছরের যেকোনো সময়ই বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যু। ফলে সাধারণ মানুষের উদ্বেগও বাড়ছে—ডেঙ্গুর কি ভ্যাকসিন নেই? থাকলে কেন বাংলাদেশে দেওয়া হয় না?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাজারে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন থাকলেও সেগুলো সব বয়স বা সব মানুষের জন্য সমভাবে নিরাপদ নয়। ফলে বাংলাদেশ এখনো ভ্যাকসিন ব্যবহারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

ভ্যাকসিন রয়েছে, তবে নানা সীমাবদ্ধতা

বর্তমানে বিশ্বে দুইটি ভ্যাকসিনকে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হিসেবে দেখা হচ্ছে—ডেঙ্গাভেক্সিয়া এবং কিউডেঙ্গা। দুটিই কয়েকটি দেশে অনুমোদন পেয়েছে, এবং কিউডেঙ্গাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও প্রাক-যোগ্যতা দিয়েছে।

ডেঙ্গাভেক্সিয়া গ্রহণের ক্ষেত্রে শর্ত হলো—টিকা গ্রহণকারীর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত থাকার রেকর্ড থাকতে হবে। আগে ডেঙ্গু না হলে জটিলতার ঝুঁকি থেকে যায়; তাই এটি সবার জন্য উপযোগী নয়।

কিউডেঙ্গা মূলত ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদিত। তবে এটি সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয় এবং ব্যাপক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এখনো বিশ্বব্যাপী নেওয়া হয়নি।

এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণেই অনেক দেশই ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ব্যবহারে এখনো সতর্ক।

বাংলাদেশ কেন ভ্যাকসিন চালু করছে না?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিনগুলোর বয়সভিত্তিক সীমাবদ্ধতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা এবং আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা—এসব কারণেই বাংলাদেশ এখনো ডেঙ্গু ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়নি।

এর পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের টেকনিক্যাল কমিটির অনুমোদনও প্রয়োজন, যা এখনো পাওয়া যায়নি।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ভ্যাকসিন অনুমোদন দিলে ডেঙ্গুকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারি ঘোষণা করতে হতে পারে, যা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।

দেশে ডেঙ্গু ভ্যাকসিন গবেষণার অগ্রগতি

 

২০১৩ সালে আইসিডিডিআরবি যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের সহযোগিতায় TV005 নামের নতুন একটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল সম্পন্ন করে। এক ডোজেই চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সম্ভাবনা এতে দেখা গেছে।

তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল সফল হলে এটি ভবিষ্যতে সহজে ব্যবহারযোগ্য ভ্যাকসিন হিসেবে উঠে আসতে পারে। তবে এখনো গবেষণা ও অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলমান।

 

২০২৪–২০২৫ সালে বাড়ছে ডেঙ্গুর চাপ

চলতি দুই বছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ আরও বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই ভ্যাকসিন আনার কথা ভাবার সময় হলেও বর্তমান ভ্যাকসিনগুলো সবার জন্য উপযোগী নয়। তাই সরকার চিকিৎসা, দ্রুত শনাক্তকরণ ও মশা নিয়ন্ত্রণকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সচেতনতাই এখন প্রধান আশ্রয়

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন থাকলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো মশার প্রজনন কমানো। বাড়িতে ও আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, মশারি ব্যবহার—এসব ব্যবস্থাই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে বড় ভূমিকা রাখে।

ভ্যাকসিনের গবেষণা অগ্রসর হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশেও ডেঙ্গু ভ্যাকসিন চালু হতে পারে। তবে ততদিন পর্যন্ত সচেতনতা ও মশা নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top