রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

বিশেষ প্রতিনিধি | ঢাকা | প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭

ছবি: সংগৃহীত

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে হত্যাকারীরা মেতে উঠেছিল পৈশাচিক উল্লাসে। আমরা হারিয়েছিলাম দেশের কৃতি সন্তানদের। বাঙালি জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা ও বেদনায় দিনটি স্মরণ করছে।

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী—
ভয় নাই ওরে ভয় নাই,
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান—
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’

তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় তখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনী। স্বাধীন বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে—এই চক্রান্ত থেকেই দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়।

এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। তারাই বুদ্ধিজীবীদের বাড়িঘর চিনিয়ে দিয়েছে, নিরীহ মানুষগুলোকে তুলে দিয়েছে ঘাতকদের হাতে।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর মিরপুরের রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুর এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অনেকের হাত ছিল পিছমোড়া করা, চোখ বাঁধা। শরীরজুড়ে ছিল ভয়াবহ নির্যাতনের চিহ্ন। এসব মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়েই পাকিস্তানি বাহিনীর বুদ্ধিজীবী নিধনের গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ্যে আসে।

এর পর থেকেই প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে জাতি শ্রদ্ধা ও শোকের সঙ্গে পালন করে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় দুটি পর্যায়ে।

প্রথম পর্যায়ে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষক ও চিকিৎসকদের হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক ও সংস্কৃতিসেবীদের বেছে বেছে হত্যা করা হতে থাকে।

মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পরিকল্পিতভাবে এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করার চেষ্টা চালায় ঘাতক বাহিনী। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজন ছিলেন, তেমনি ছিলেন সম্ভাবনাময় তরুণ প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতিতে সারা দেশ নীরব শ্রদ্ধা জানাবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত আন্তমন্ত্রণালয় সভা সূত্রে জানানো হয়েছে—

  • সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

  • সকাল ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top