হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক, জুলাই যোদ্ধা ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে তাকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসার জন্য ১৩ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. জাফর ইকবালের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড হাদির চিকিৎসা তদারকি করছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তার মস্তিষ্ক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ফুসফুসেও গুরুতর আঘাত রয়েছে।
অস্ত্রোপচার শেষে তাকে কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্টের আওতায় ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্রেন প্রোটেকশন প্রটোকল অনুসরণ করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হবে। শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে পুনরায় ব্রেনের সিটি স্ক্যান করা হতে পারে। ফুসফুসে ইনজুরির কারণে চেস্ট ড্রেইন টিউব স্থাপন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে অল্প পরিমাণ রক্ত বের হচ্ছে। ফুসফুসে সংক্রমণ ও এআরডিএস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে হাদির জন্য দেশজুড়ে চলছে দোয়া ও প্রার্থনা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাসহ দেশের বহু মানুষ তার সুস্থতা কামনা করেছেন। অনেকে রোজাও রেখেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বদ্ধপরিকর।
হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাধারণ শিক্ষার্থী, ইনকিলাব মঞ্চ, জুলাই যোদ্ধা এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করা হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।
ঘটনার দুই দিন পার হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে অপরাধীদের ধরতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানিয়েছেন, হাদির ওপর গুলিবর্ষণকারী একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তাকে গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহসহ জল, স্থল ও আকাশপথে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশজুড়ে শুরু হয়েছে অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট ফেজ-২’।
হামলাকারীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতা গ্রহণ করেছে। আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজনদের তল্লাশি চলছে। হবিগঞ্জ, বড়লেখা ও অন্যান্য সীমান্তবর্তী এলাকাতেও টহল জোরদার করা হয়েছে।
হাদির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রয়োজনে তাকে বিদেশে পাঠানোর কথাও জানান তিনি।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।