বিশ্ব মানবিক দিবস: ৪ বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীকে জাতিসংঘের স্বীকৃতি
ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৮:৫৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক। নিউজফ্ল্যাশ৭১.কম
বিশ্ব মানবিক দিবসে চার বাংলাদেশী তরুণ-তরুণীকে জাতিসংঘ ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। আর্ত-মানবতার সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য পৃথিবীজুড়ে বেশ কয়েকজনের নাম এ তালিকায় উঠে আসে। যাদের মধ্যে বাংলাদেশের চারজনের নাম উঠে আসে। এরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর হাসান সৈকত, ব্র্যাকের প্রকৌশলী রিজভী হাসান, অনুবাদক সিফাত নুর ও আঁখি। করোনা মহামারিতে আক্রান্ত এবং অসহায়দের পাশে দাড়ানোয় বিরল এ সম্মাননা অর্জন করেছেন তারা।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশি তাদের কর্মকান্ডের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত ‘বিশ্ব মানবিক দিবস’। চার বাংলাদেশীর মানবিক কার্যক্রমের এমন অনন্য দৃষ্টান্ত জাতিসংঘের দৃষ্টি এড়ায়নি।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরা যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যায় তখন সৈকত ক্যাম্পাসে থেকে প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করতে নেমে পড়েনঃ। এপ্রিলের শুরু থেকে টানা ১১৬ দিন কার্যক্রম চালানোর পর করোনার প্রকোপ কমলে তিনি সুনামগঞ্জে গিয়ে বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাড়ান। বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা গ্রহণ করে তিনি এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।
বাস্তব জীবনের নায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া আরেক বাংলাদেশি আঁখি। যিনি একসময়ে বাংলাদেশের অনেক শিশুর মতো শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে আঁখিকে পুনর্বাসনে সহায়তা দেয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন’। বয়সের কারণে স্কুলে ফেরানো না গেলেও তাকে দর্জি কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি সেলাই মেশিন এবং কিছু কাপড় কিনে দেয় সংস্থাটি। সেখান থেকেই আখিঁ স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন ভবিষ্যতে নিজেই গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার।
স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে আঁখি তার মা এবং বড় বোনের সহায়তায় ব্যবসা শুরু করেন। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার শুরুর দিকে মাস্কের সংকট দেখা দিলে শুরু করেন মাস্ক তৈরির কাজ। আশপাশের দরিদ্র মানুষের মাঝে কমদামে মাস্ক বিক্রি করেন আঁখি।
জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাওয়া আরেক তরুন রিজভী হাসান কাজ করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ব্র্যাক’-এ। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পে কাজ পান। এসময় তিনি লিঙ্গভিত্তিক মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার নারীদের সেবা দিতে স্বল্প খরচে নিরাপদ স্থান গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের কাউন্সেলিং এবং দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশী সিফাত নূর স্বীকৃতি পেয়েছেন তার অনুবাদের কাজের জন্য। জাতিসংঘের মতে, যেকোনো সঙ্কটের সময়ে খাবার, পানি ও আশ্রয়ের মতোই মানুষের দরকার পড়ে তথ্য ও যোগাযোগের। এসব তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় তাদের নিজস্ব ভাষায়। আর এখানেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে একজন অনুবাদকের কাজ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেছেন সিফাত নূর। ২০২০ সালের মার্চে ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস নামে একটি সংস্থায় কাজ শুরুর পর এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি শব্দ বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিনি। আইএফআরসি ও ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার হয়ে এসব শব্দ অনুবাদের মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে জীবন রক্ষাকারী তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন তিনি। সম্প্রতি কোভিড-১৯ নিয়ে তার অনুবাদ কাজের মাধ্যমে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এজন্য সিফাতকে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে মানবিক মানুষ হিসেবে।
এমকে/এনএফ৭১
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।