• ** জাতীয় ** আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা ** আবারও তিন দিনের ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি ** চুয়াডাঙ্গায় হিট স্ট্রোকে দুই নারীর মৃত্যু ** ইউআইইউ ক্যাম্পাসে ‘কৃত্রিম বৃষ্টি’ নিয়ে তোলপাড় সারাদেশ ** সিলেটে মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু ** নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে যুবকের মৃত্যু ** সব ধরনের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন : https://www.newsflash71.com ** সব ধরনের ভিডিও দেখতে ভিজিট করুন : youtube.com/newsflash71 ** লাইক দিন নিউজফ্ল্যাশের ফেসবুক পেইজে : fb/newsflash71bd **


শুরু হলো উত্তাল সময়ের স্মৃতিমাখা ভাষার মাস

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১৫:১১

ছবি: সংগৃহীত

বছর ঘুরে আবার এলো মহান ফেব্রুয়ারি। বাঙালির কাছে এই মাস ভাষার মাস, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হওয়ার মাস। বাঙালির জাতিসত্তা, স্বকীয়তা আর সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার গৌরবগাথা-রচিত মাস।

ফেব্রুয়ারিতেই বাঙালির স্বাধীনতা, সাম্য আর গণতন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছিল। স্বাধীনতাসংগ্রামের বীজ বপনে ভাষা আন্দোলনের আবেদন যুগান্তকারী। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সোপানে চড়েই এসেছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। বলা যায় মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলনেরই পরিণতি।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্টে। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পর বাঙালির রাষ্ট্রভাষা কী হবে তার ফয়সালা করতে চেয়েছিল পাকিস্তানি শাসকরা। তারা উর্দুকে পূর্বপাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল। ৪৮ সালে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।

সাত মাস যেতে না যেতেই রক্তের আঁচড় দিয়ে বাঙালি শুরু করে তার অস্তিত্বের লড়াই। ১৯৪৮ সালের মার্চে বাঙালি প্রগতিশীলরা ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই বলে মাঠে নেমে পড়েন। ১৯৪৭ সালে যে অসাম্প্রদায়িক শক্তির পরাজয় ঘটে, সেখানে ১৯৪৮-এর শুরুতেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তিমূলে আঘাত হানার মাধমে সেই শক্তি আবার জেগে ওঠে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে ভারতবর্ষ এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে ভাষা সমস্যা। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে হায়দারাবাদে অনুষ্ঠিত উর্দু সম্মেলনে মুসলিম লীগ নেতা চৌধুরী খালেকুজ্জামান ঘোষণা দেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা হবে উর্দু’। তার সঙ্গে সুর মেলান আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন।

তখনো ভাগ হয়নি দেশ। প্রতিবাদ করেন বরেণ্য বাঙালি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ’৪৭-এ পাকিস্তান আসে। মনিঅর্ডার ফর্ম, পোস্ট কার্ড, খাম ও কাগজের মুদ্রা থেকে বাদ যায় বাংলা। ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে বাঙালি। রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনের প্রথম সূত্রপাত করে তমদ্দুন মজলিস।

উত্তাল পথ পেরিয়ে একদিন আসে আগুনঝরা ’৫২  প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ। উদ্দীপ্ত কণ্ঠে দাবি তোলে —না, বাংলাও হবে পাকিস্তানের আর একটি রাষ্ট্রভাষা। এর আগে নতুন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সোচ্চার হন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, মওলানা ভাসানি, ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, আবদুল হক এবং সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীসহ অনেক বিজ্ঞজন।

১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ এবং দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ কোনোটাই প্রগতিশীল বাঙালির জন্য কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সেটা প্রমাণিত হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। বাংলা ও বাঙালির জীবনে অপ্রাসঙ্গিক দেশ ভাগ এক কঠোর শৃঙ্খলের রূপ নিয়ে যে উন্মাদনার পরিবেশ তৈরি করে সেখানে বাঙালি দুর্বিনীত, দুর্দমনীয় প্রতিরোধে সম্মুখ সমরকে আলিঙ্গন করতে পিছপা হয়নি।

পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এমন মহান আত্মত্যাগের ঘটনা বিরল। বাংলার দামাল সন্তানদের এই আত্মত্যাগ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। এদিন ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে দিনটি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে পালিত হয়।

ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ। নতুন প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পায় গোটা জাতি। ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য সীমাহীন। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য এমন মহান আত্মত্যাগের ঘটনা বিরল।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top