মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

অসহায় বন্যার্তদের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই হৃদয়ে কাঁপন ধরে

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:১৮

ছবি: সংগৃহীত

রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কবলে পড়ে বাংলাদেশ। স্মরণকালের ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় ভাসতে থাকে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। চলমান বন্যায় ফেনী, নোয়াখালী, ল্ক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ দেশের ১১ জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ জনে। পাশাপাশি পানিবন্দী রয়েছে ৬ লাখেরও বেশি পরিবার।

যথাসময়ে পূর্বাভাসবিহীন এ বন্যায় আক্রান্ত এলাকার বাসিন্দারা অপ্রস্তুত অবস্থায় পানিবন্দী হয়ে পড়েন। যে দৃশ্য দেখা গিয়েছিল, তা কল্পনাই করেননি কেউ। শত শত মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে গলা পরিমাণ পানিতে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। সর্বহারা হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ, তলিয়ে গিয়েছে গবাদি পশু ও ফসলি জমি। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।

রাতের অন্ধকার ভেদ করে তীব্র আলোর ঝলকানি আসে। বন্যার ভয়াবহতা দেখে বানভাসি মানুষের জন্য ত্রাণ তৎপরতায় নেমে পড়েন দেশের ছাত্র–জনতা। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরমুখী ত্রাণসামগ্রীর কাফেলার কোনো কমতি ছিল না। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মহাযজ্ঞে শামিল হয় আফজাল সাজেদা ফাউন্ডেশনও। ত্রাণ তৎপরতায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে সংস্থাটি। সহায়তা প্যাকেজে ছিল খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পোশাক সামগ্রী। ওষুধসহ দুই টন খাবার নিয়ে সংস্থাটি হাজির হয় লক্ষ্মীপুরের ৪শ পরিবারের মাঝে।

এ সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আয়োজকরা। আফজাল সাজেদা ফাউন্ডেশন সব সময় বিপদ্গ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের কঠিন সময়ে সংস্থাটি ছুটে গিয়েছে দেশের নানা প্রান্তে। যেকোনো জাতীয় দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায় সংস্থাটি। জনহিতকর কাজ করে মানুষের পাশে দাড়াতে চায় সংগঠনটি।

আফজাল সাজেদা ফাউন্ডেশন একটি সামাজিক ও মানবিক সংগঠন। অসহায় মানুষকে নিঃস্বার্থ সেবার লক্ষ্যে ২০২০ প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি। যখন প্রচন্ড শীতে নাকাল পুরো দেশ তখনও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন তারা। সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষদের সেবা করাই আফজাল সাজেদা ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য।

আশার কথা, দেশের বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুরসহ বেশির ভাগ জেলায় বাড়িঘর ও সড়ক থেকে পানি নামছে। তবে বানভাসিরা এখনও পাহাড়সম দুর্ভোগের শিকার। বন্যায় অনেকের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্রসহ যাবতীয় সরঞ্জাম। এ অবর্ণনীয় ক্ষতি কীভাবে পোষাবেন, সেই দুশ্চিন্তায় পাগলপ্রায় অনেকে।

অর্ধাহারে-অনাহারে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে দিন যাপন করছেন বানভাসি মানুষ। আশ্রয়কেন্দ্র বা প্রধান সড়কের আশপাশের বাসিন্দারা ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা এখনো প্রয়োজনীয় খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না। ফলে খেয়ে-না-খেয়ে সীমাহীন কষ্টে দিন কাটছে তাদের।

বন্যা উপদ্রুত এলাকার বাতাস এখনও বিপর্যস্ত বানভাসীদের কান্নায় ভারী। অসহায় বন্যার্তদের ক্ষতচিহ্ন দেখলেই হৃদয়ে কাঁপন ধরে। সব হারিয়ে নিঃস্ব মানুষগুলোর সামনে এখন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অসহায় মানুষ যখন পানিবন্দী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন, তখন সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা মানবিক দায়িত্ব। স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এখনই সময়, আর দেরি নয়।

তবে সজাগ থাকতে হবে বন্ধুত্বের জলে বাংলাদেশ যেন সয়লাব না হয়। নদী শাসনের মাধ্যমে শোষণ আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে। যেন বাঁধের জল-কপাট খুলে দিয়ে জলাগ্রাসন আর পানি-সন্ত্রাস আর না ঘটে। পানির মোড়লিপনা আন্তর্জাতিক আইনে বৈধতা দেয় না।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top