মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

নব্য ফ্যাসিবাদের খপ্পড়ে যেন মুক্তিকামীর রক্ত অর্থহীন না হয়

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ আগষ্ট ২০২৪, ১২:৩৮

ছবি: সংগৃহীত

৫২ থেকে দুহাজার তেরো। এরপরে নতুন অধ্যায় রচিত হলো বাংলাদেশে। তারুণ্য শক্তি বদলে দিলো ইতিহাস। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রক্তে অর্জিত হলো ঐতিহাসিক বিজয় ২৪। প্রমাণ হলো গণ-অভ্যুত্থান কখনো গুলি দিয়ে ঠেকানো যায় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে দ্রোহ যাত্রা কেবল শুরু হলো। রাষ্ট্র সংস্কারে যেতে হবে বহুদূর। শুভ্র সুন্দর সকাল আপনা থেকেই উদিত হয় না আবারও প্রমাণ হলো। অভিনন্দন জানাই অভ্যুত্থানের নায়ক মুক্তিকামী ছাত্র জনতাকে।

রাষ্ট্র সংস্কারে টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবার সজাগ থাকতে হবে। আমরা বারংবার রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপ চাই না। দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দুর্নীতিবাজ নেতা চাই না। কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্র বিদেশির হাতে বন্ধক দিতে চাই না। বাংলাদেশকে আর জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবেও দেখতে চাই না। আমরা চাই না অর্থ ও অস্ত্রের কাছে রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়ুক।

রাষ্ট্রীয় চাঁদাবাজির স্বপ্নদ্রষ্টাদের আর ফেরৎ চাই না। সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের পুনরাবৃত্তি চাই না। দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে যাদের বাস তাদের প্রত্যাগমনচাই না। উন্নয়নের নামে বরাদ্দের টাকা ভাগাভাগি চাই না। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত কোন শক্তির আস্ফালন চাই না। তলে তলে আপোসকারীদের নির্লজ্জতা চাই না। দ্রব্যমূল্যের আগুনে দগ্ধ হতে চাই না।

গণমাধ্যমের কণ্ঠ কেউ চেপে ধরুক এটা চাই না। বিরুদ্ধ মত দমনে বাক স্বাধীনতা হরণ চাই না। বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রীয় অর্গানের পূর্ণ স্বাধীনতা চাই। মানবিক, সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণে আইনের শাসন ও জবাবদিহি চাই। চরম কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনে পিষ্ট হতে চাই না।

ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাট আমাদের দেশে চিরকালীন জ্বলন্ত ইস্যু। ক্ষমতার অপব্যবহারে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের চেহারা নতুন নয়। ঘুষ-দুর্নীতি ও লুটপাট হয় অশুভ শক্তির মিলনে। দুর্নীতির বাড়বাড়ন্ত থামেনা কখনও। কম্বল চোর, চাটার দল থেকে ক্রমে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে ওঠে গডফাদার ও লুম্পেন বুর্জোয়া। চাই না ২২ পরিবারের বদলে লাখো পরিবারের উত্থানপর্ব। চাই না মাফিয়া চক্রের শুদ্ধাচার কৌশল, কৃচ্ছ্রসাধন নাটক। প্যান্ডোরার বাক্সে সবার কাহিনী জমা আছে।

গণমুখী, বিজ্ঞানভিত্তিক নাগরিক প্রয়োজনের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা চাই। কৃষক শ্রমজীবীর পার্মানেন্ট সলিউশন চাই। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা চাই। সকল দলের সকল নেতাকর্মীর সম্পদ জনসম্মুখে প্রকাশের বাস্তবায়ন চাই। রাজনীতি যেনও অর্থ উপার্জনের বড় মাধ্যম না হয়। মুক্তিকামী ছাত্র জনতার আন্দোলন যেন ব্যর্থ না হয়। স্বপ্নের বেলুন যেন ফুটো না হয়ে যায়। গণেশ  উল্টে যাওয়া রাজনীতি চাই না।

দ্বিদলীয় বৃত্ত ভাঙ্গুন বিকল্প শক্তি সন্ধান করা জরুরি। জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াই আর কত। মিলিটারি বুরোক্রেসি চাই না। নিরপেক্ষ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া জাগ্রত করুন। ডেমোক্রেটিক সোসাইটি নিশ্চিতে পরিবারতন্ত্র উৎখাতে সজাগ থাকুন। কারও ভ্যান্ডালিজমের শিকার হতে চায় না বাংলাদেশ। রাষ্ট্র সংস্কারের টেকসই সমাধানে আওয়াজ তুলুন।

লিখেছেন রাজীব রায়হান

কেবল কোটা বৈষম্য নয় রাষ্ট্রের সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারি রাখুন। নতজানু বিগত সরকারগুলোর পরীক্ষিত চোরদের প্রত্যাখ্যান করুন। ফ্যাসিবাদ স্বৈরতন্ত্রের পালাবদল দেখতে চায় না জনগণ। প্রশাসনের নিলর্জ্জ দলীয়করণ ন্যায়বিচারের অন্তরায়। গণমুক্তির প্রয়োজনে রাষ্ট্রের প্রতিটি অর্গানের মধ্যে সমন্বয় চাই। তবে লাল ফিতার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা চাই না।

পলিটিক্যাল স্ট্রাকচার আমূল সংস্কার চাই। প্রজাতন্ত্রের নামে পরিবারতন্ত্র আর যেন না আসে। রাষ্ট্রশাসন যেন দুই পরিবারের কুক্ষিগত না হয়। যে সংসদে সাংসদ নিজ দলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন না, তারও সংস্কার চাই। রাজনৈতিক দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না সেটাও আলোচনায় রাখুন। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ আর কত দেখবেন। এত বেশি রাজনৈতিক এন্টাগনিজম চাই না।

সিস্টেম চেঞ্জ করাই সমাধানের মূলমন্ত্র। এবার ভুল করলে এ ক্ষত আর শুকাবে না। মনে রাখবেন আমরা আবেগপ্রবণ আত্মঘাতি স্মৃতিভোলা জাতি। কেউটে সাপের বদলে গোখরা সাপের বাস চাই না। মনে রাখতে হবে এক কানা আরেক কানাকে পথ দেখাতে পারে না। ফলে মুখে মধু পেটে বিষ চাই না। 

শাসকের পরিবর্তন থেকে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন কায়েম করুন। নিরপেক্ষ রেফারি খুজুন, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা ভাঙ্গুন। তাঁবেদার তথ্যব্যবস্থায় অভ্যস্ত পাচাটাদের প্রত্যাখ্যান করুন। সরকারি প্রশাসনের যেন দলীয়করণ না হয়। বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর নগ্ন গোয়েন্দা নজরদারি মানা যায় না।

কমিউনাল হারমনি চাই বিপরীতে পৈশাচিক পিরিয়ড চাই না। গণতান্ত্রিক মানসিকতার আখড়া চাই। উন্নয়নের ফিরিস্তির আড়ালে মধুচন্দ্রিমা চাই না। দুধের স্বাদ কেবল ঘোলে মেটাতে চাই না। মুক্তিপিপাসু মনের একান্ত চাওয়া যেন সুদূরপরাহত না হয়। আমরা কোনোভাবেই অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে পারি না। আমাদের সামনে বিপদসংকুল পথ ও রাজনৈতিক মন্দা।

সাবেক শাসকদের চাটুকার, ক্ষমতালোভী ও সুযোগসন্ধানীরা যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশী হতে না পারে। আগামীর যাত্রায় আমরা যেন ভুল পথে না হাঁটি। সব শক্তি খুব ভালোভাবে চেনা আছে। এটা বুঝতে রকেট সায়েন্স প্রয়োজন হয় না। নব্য ফ্যাসিবাদের খপ্পড়ে যেন অর্জন অর্থহীন না হয়। রাজনৈতিক সামাজিকীকরণ ও দীক্ষা ছাড়া সংস্কার আনয়ন কঠিন। গণতান্ত্রিক অভিযোজন ও মনোভঙ্গি রেখে সাম্য, সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।

নাগরিক স্বাধীনতার অবক্ষয় ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় না। উন্নয়নের পারদ মাত্রায় গরিব ও ধনীর বৈষম্য চাই না। অনুচ্ছেদ ৭০ সংস্কার করে জাতীয় ইস্যুতে ফ্লোর ক্রস করার সুযোগ ফেরত আনুন। আইনপ্রণেতাদের পেছনে যে বিশাল অর্থ-সম্পদ ব্যয় হয়, তা কমিয়ে আনুন। মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ করে শুভ নেতৃত্বের বিকাশে সহায়ক হন। 'শ্যাম রাখি না কুল রাখি' টানাপোড়েনে থাকলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। রাজনীতির ভাষা বুঝতে হবে। ডেমোক্র্যাটিক চর্চা করা জরুরি। না হলে 'অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হইয়াও হইল না শেষ'।

দুষ্ট প্রকৃতির প্রজা পীড়নকারী কংস মামা চাই না। কর্তৃত্ববাদী মোসাহেবদের নির্দেশিত’ নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র চাই না। বাংলাদেশের মানুষ মজ্জাগতভাবে গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সমালোচনার কণ্ঠরোধ করে ডেমোক্র্যাসির ক্লাবে ঢুকতে পারবো না। কাঙ্খিত বাংলাদেশ উপহার দিতে না পারলে প্রচণ্ড মর্মান্তিক মোচড়ে আপনারাও অপাঙ্ক্তেয় হবেন। কবি বলেছেন, আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া। আসুন, নষ্ট রাজনৈতিক কালচারে গা না ভাসিয়ে নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করি।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top