পরলোকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২১, ০৩:১৩
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)।
মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দেশে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছিল।
এর আগে দেশে এভারকেয়ার হাসপাতালে তার হার্টে রিং পড়ানো হয়। তিনি ফুঁসফুঁসের জটিল সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন।
তিনি স্ত্রী হাসনা মওদুদ, এক মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তার একমাত্র ছেলে আমান মমতাজ মওদুদ ২০১৫ সালে ৩৮ বছর বয়সে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিক মওদুদ আহমদ ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ এবং মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মান পাস করে ব্রিটেনের লন্ডনে লিঙ্কন্স ইন থেকে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল' ডিগ্রি অর্জন করেন। লন্ডনে পড়াশোনা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং হাইকোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তিনি ব্লান্ড ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলনে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এ ইয়াহিয়া খান আহুত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন।
১৯৭৭-৭৯ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৭৯ সালে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়।
১৯৮১ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান নিহত হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ এর নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এক বছর পর ১৯৮৬ সালে তাকে আবার উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং এরশাদ তাকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন।
৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকার জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। ২০০১ সালে তিনি বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তাকে আইনমন্ত্রী করা হয়। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ আসন থেকে পাঁচবারের সংসদ সদস্য।
সবশেষ ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। অবশ্য ২০০৮ সালে নিজ আসন থেকে হেরে যাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেড়ে দেয়া বগুড়ার একটি আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
তার মৃত্যুর খবরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার মৃত্যুতে শোক জানাচ্ছেন।
এনএফ৭১/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।