শোবিজ অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের নায়করা: জীবন বাজি রেখে রচনা করেছেন ইতিহাস

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫২

সংগৃহীত

শোবিজ অঙ্গনে এমন কিছু নাম রয়েছে যারা শুধু শিল্পী হিসেবেই পরিচিত নন, বরং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। তারা সরাসরি যুদ্ধের মাঠে অংশগ্রহণ করেছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছেন। স্বাধীনতার পর দেশের সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র ও মঞ্চে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

ফারুক (আকবর হোসেন পাঠান দুলু)

পুরান ঢাকার মালি টোলার এক সময়ের পরিচিতি ‘দুলু গুন্ডা’, ফারুক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাদেরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর তিনি আবারও চলচ্চিত্রে ফিরে আসেন। স্বাধীনতার পর এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফারুকের ক্যারিয়ার শুরু হয়।

সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ)

১৯৭১ সালে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সোহেল রানা বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ প্রযোজনা করেন। ১৯৭৩ সালে ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়ক হিসেবে অভিনয় জীবনের সূচনা হয়।

খসরু (কামরুল আলম খান)

ঢাকার গেরিলা বাহিনীর অধিনায়ক খসরু ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একজন সাহসী যোদ্ধা। তিনি ‘ওরা ১১ জন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

জাফর ইকবাল

৮০ দশকের জনপ্রিয় অভিনেতা ও কণ্ঠশিল্পী জাফর ইকবাল ১৯৭১ সালে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ৭০-এর দশকে নিয়মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন এবং প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আপন পর’।

জসীম

বাংলাদেশের অ্যাকশন ছবির পথিকৃৎ অভিনেতা জসীম কলেজ শিক্ষার্থী থাকাকালীন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।

হুমায়ূন ফরীদি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হুমায়ূন ফরীদি ১৯৭১ সালে পড়াশোনা ছেড়ে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। স্বাধীনতার পর মঞ্চ ও থিয়েটারে যোগদান করে অভিনয় জীবনের শুরু করেন। টেলিভিশনে অভিষেক ঘটে ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মাধ্যমে।

আসাদুজ্জামান নূর

বাকের ভাই খ্যাত অভিনেতা নূর মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি সেক্টর ৬-এ অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৪ সালে ‘রঙের ফানুস’ নাটকের মাধ্যমে টেলিভিশনে অভিনয় শুরু করেন।

রাইসুল ইসলাম আসাদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা রাইসুল ইসলাম আসাদ ঢাকার উত্তর বাহিনী নামে পরিচিত একটি গেরিলা দলে যুদ্ধ করেন।

দেলোয়ার জাহান ঝন্টু

চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু ১৯৭১ সালে সম্মুখসারিতে যুদ্ধ করেন। ১৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্বাধীন করে শীতলক্ষ্যা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৮ সালে তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘বন্দুক’ মুক্তি পায়।

এই নায়ক ও নির্মাতারা শুধু শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ নন, তারা ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষী ও দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সাহস, আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও প্রেরণা জোগাচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্য।

 

এনএফ৭১/ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top