সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে সভা ছাড়লেন কাদের
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১ আগষ্ট ২০২৪, ১৩:০৬

মতবিনিময়ের জন্য ডেকে কথা বলার সুযোগ না দেওয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একপর্যায়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন টানা তিন বারের সাধারণ সম্পাদক।
শেষ পর্যন্ত সভা শেষ না করেই ফ্লোর ছেড়ে নিজ অফিস কক্ষে চলে যান তিনি। এসময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা বাইরে বের হয়ে ‘ভুয়া ভুয়া ‘ স্লোগান দিতে থাকেন। তারা বলছেন, দলের দুর্দিনে সব সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এগিয়ে আসে। মত বিনিময় করার কথা বলে তাদের ডেকে এনে নিজেই বক্তব্য দিয়ে চলে যাওয়াটা ‘স্বেচ্ছাচারিতা’।
বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
শুরুতেই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে সভাস্থলে দেখে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি সেখানে কী করছেন জানতে চান। আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরকারবিরোধী পোস্ট করেছেন, সেটিও জানতে চান সাবেক নেতারা।
এরপর কর্মসূচি শুরু হলে ওবায়দুল কাদের আমন্ত্রিত নেতাদের কথা না শুনে সংবাদ সম্মেলনের মতো করে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে কর্মসূচি শেষ করতে চেয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি।
বৈঠক উপস্থিত একাধিক ছাত্রনেতা জানান, সাবেক ছাত্রনেতাদের মতবিনিময় সভার জন্য ডেকে গণমাধ্যমের উদ্দেশে কথা বলা শুরু করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা হট্টগোল শুরু করেন। তারা ওবায়দুল কাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, তাদের ডেকেছেন, আগে তাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন। সেটি না করে কেন গণমাধ্যমের সামনে কথা বলা শুরু করেছেন?
এসময় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এরা কারা, এদের এখানে কে ডেকেছে। একপর্যায়ে হট্টগোল শুরু হলে কথা বলা শেষ না করে ওবায়দুল কাদের তার অফিস কক্ষে চলে যান। তখন সাবেক নেতারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচতলায় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন তারা।
এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত সাবেক ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে বলেন, অভিমান ভুলে কোটা আন্দোলনের নামে যারা নারকীয় ধ্বংস চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আওয়ামী লীগ দেখবে মাঠে কারা থাকে। পার্টি অফিসে বসে থাকতে দেওয়া হবে না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে উদ্দেশ করে বলতে থাকেন, ‘মতবিনিময় সভা ডেকে সংবাদ সম্মেলন করছেন কেন? তাহলে আমাদের ডাকলেন কেন? আমরা তো টিভি থেকেই আপনার বক্তব্য শুনে নিতে পারতাম। আমাদেরও তো বহু কথা আছে। আগে আমাদের কথা শুনবেন, আলোচনা করবেন, তার পর ব্রিফ করেন। তা না করে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করে দিলেন।’
পেছনের সারিতে বসা কয়েকজন ছাত্রনেতা তাদের দীর্ঘদিন ধরে পদবঞ্চিত হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরে বলেন, সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারীদের পদপদবিতে আনা হলেও সাবেক ছাত্রনেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো কমিটি বা কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে আনা হয়নি। এখন মতবিনিময় সভায় ডেকে কথাও বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্য দিনের মতো দীর্ঘ না করে শেষ করে দেন ওবায়দুল কাদের। এর পর তিনি মতবিনিময়স্থল ছেড়ে যাওয়ার সময় পেছনে বসা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে আওয়াজ তোলেন। তার পর অনেকেই ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে ওঠেন।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশেও নানা কটূক্তি করতে শুরু করেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সপ্তম তলায় নিজের কক্ষে চলে যান। সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা অবস্থান করে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। অন্য কেন্দ্রীয় নেতারাও যার যার মতো করে চলে যান।
তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের চলে যাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের নিচতলা ও সামনের সড়কে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। এ অবস্থা বেশ কিছুক্ষণ চলার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে।
এদিকে, মতবিনিময় সভা শেষে বের হওয়ার সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককেও ঘিরে ধরে কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হৈহুল্লোড় করেন। তাদের অনেকেই বলতে থাকেন, ‘উনি এখানে কেন? উনার ছেলে তো সরকারের বিরুদ্ধে (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে) পোস্ট দেয়।’ ওই পরিস্থিতিতে কয়েকজন নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দোতলা থেকে আব্দুর রাজ্জাককে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামিয়ে গাড়িতে তুলে দেন
গতকালের মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। তাদের কয়েকজন ‘সাংবাদিকরা এখানে কেন’ এমন প্রশ্ন তুলে হইচই শুরু করেন। উপস্থিত কয়েকজন ক্যামেরাপারসনকে লক্ষ্য করে গালাগালসহ তাদের মারতে আসেন।
এর আগে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদুল আসাদ রাসেলকেও এ সময় দেখা যায়। তাঁকে শোকজের নির্দেশ দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। রাসেলকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি। কিন্তু গতকালও ওবায়দুল কাদেরের গাড়ির সামনেই অবস্থান নিতে দেখা যায় ‘প্রটোকল বাহিনী’র সদস্য হিসেবে পরিচিত এ নেতাকে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।