কী হচ্ছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে-বাইরে
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৩৩
পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও সেই খবর সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছায় কিছুটা পরে, প্রধানত রেডিওর মাধ্যমে। তবে দুপুরের দিকেই যারা ভারতীয় বাহিনীকে ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখেছিলেন এবং আগে থেকেই আত্মগোপনে থাকা মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসেন—তাদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে বিজয়ের নিশ্চিত অনুভূতি।
গবেষকদের মতে, আত্মসমর্পণ কীভাবে হবে—তা নিয়ে কিছু উদ্বেগ থাকলেও ভারতীয় বাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করার পর বিজয় যে অনিবার্য, সে বিষয়ে আর তেমন কোনো সংশয় ছিল না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তার বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জি ১৯৭১-২০১১ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে এবং বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে ভারত-বাংলাদেশ যৌথবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সেনারা শর্তহীন আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজী ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা।
বিবিসিতে ২২ ডিসেম্বর ১৯৭১ প্রচারিত অ্যালান হার্টের তথ্যচিত্রে দেখা যায়, মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছেন এবং মানুষ ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখর হয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছে। যদিও কোথাও কোথাও তখনো গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক আফসান চৌধুরী বলেন, ক্যান্টনমেন্টে কী ঘটছে তা সাধারণ মানুষের জানা ছিল না। তবে ঢাকার রাস্তায় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীকে দেখেই মানুষ নিশ্চিত হয়ে ওঠে যে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়েছে। আত্মসমর্পণের খবর পরে সবাই রেডিওতে শোনে।
লেখক ও গবেষক মফিদুল হক জানান, ক্যান্টনমেন্টে ভারতীয় ও পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আত্মসমর্পণের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা চলাকালে বাইরে ছিল উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। একই সময় শহরের রাস্তায় নেমে আসে মানুষ, বেরিয়ে আসে মুক্তিযোদ্ধারা।
প্রয়াত সেনা কর্মকর্তা মইনুল হোসেন চৌধুরী পরে এক নিবন্ধে লেখেন, সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রবেশের সময় রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই জনশূন্য। আত্মসমর্পণ সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে ভয় ও সন্দেহ কাজ করছিল।
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে আত্মসমর্পণ সম্পন্ন হওয়ার পর ঢাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উল্লাস। বিভিন্ন এলাকায় মিছিল, স্লোগান, মিষ্টি বিতরণ ও ফাঁকা গুলির শব্দে মুখর হয়ে ওঠে রাজধানী। যদিও মিরপুর ও নয়াবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় তখনো উত্তেজনা ও বিচ্ছিন্ন গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়।
আফসান চৌধুরীর ভাষায়, “মানুষ তখন মুক্তির আনন্দে উল্লসিত। দেশ সত্যিই স্বাধীন হলো। তবে একদিন পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।