বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২

হাদিকে গুলির আগের রাতেই হত্যাচেষ্টার ইঙ্গিত দেন শুটার ফয়সাল

নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৫২

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে চালানো গুলির ঘটনার আগে থেকেই হত্যাচেষ্টার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শুটার ফয়সাল। ঢাকার সাভারের একটি রিসোর্টে অবস্থানকালে তিনি তার কথিত বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমাকে জানান, পরদিন এমন একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে—যা ‘সারা দেশ কাঁপাবে’। পরদিনই রাজধানীর পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে হাদির ওপর গুলি চালানো হয়। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে পাওয়া এসব তথ্য নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে উঠে এসেছে, মোহাম্মদপুরের এক সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। হত্যাচেষ্টা, অর্থায়ন, অস্ত্র সরবরাহ, পালিয়ে যাওয়া ও সীমান্ত পারাপারে সহায়তায় অন্তত ২০ জনের একটি সংগঠিত গ্রুপ জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

র‍্যাব ও পুলিশের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, ম্যাগাজিন এবং কয়েক কোটি টাকার চেক। গ্রেফতারদের রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আশঙ্কা, মাঠে আরও শুটার গ্রুপ সক্রিয় থাকতে পারে।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বোনের বাসার নিচ থেকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের দুটি ম্যাগাজিন ও ১১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে র‍্যাব। একই ঘটনায় নরসিংদী সদর উপজেলার তরুয়া এলাকার মোল্লার বাড়ির সামনে তরুয়ার বিলে পানির মধ্য থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, একটি খেলনা পিস্তল ও ৪১ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শুটার ফয়সালের বাবা হুমায়ুন কবির ও মা মোসাম্মাৎ হাসি বেগমকে র‍্যাব-৩ গ্রেফতার করে পরে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।

ওসমান হাদি হত্যাচেষ্টায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার ৯ জন হলেন—ফয়সালের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু, ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের কথিত মালিক আবদুল হান্নান, সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও, ফয়সালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও মোটরসাইকেলের মূল মালিক মো. কবির এবং ফয়সালের বাবা-মা।

এর মধ্যে আবদুল হান্নানকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। ফয়সালের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে পাঁচ দিনের এবং কবিরকে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সূত্র জানায়, ঘটনার আগের রাতে ফয়সাল ও আলমগীর সাভারের গ্রিন জোন রিসোর্টের ২০৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। সেখানে ছিলেন কথিত বান্ধবী মারিয়া। ওই রাতে ফয়সাল বলেন, ‘কাল এমন কিছু হবে, সারা দেশ কাঁপবে’। পরদিন সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে তারা রিসোর্ট ছেড়ে ঢাকায় ফেরেন।

হামলার পর ফয়সাল ও আলমগীর আগারগাঁওয়ের কর্নেল গলিতে ফয়সালের বোন জেসমিনের বাসায় যান। সেখানে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করা হয় এবং ফয়সালের পালানোর ব্যবস্থা করা হয়। স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া বিকাশের মাধ্যমে ফয়সালের কাছে মোট ৪০ হাজার টাকা পাঠান বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যাচেষ্টায় কার কী ভূমিকা ছিল এবং এর পেছনে কারা জড়িত—সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার বেলা ২টা ২০ মিনিটে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top